শুক্রবার, মার্চ ৩১, ২০২৩
Home > খেলাধুলা > বিশ্বকাপ দল পর্যালোচনা “জার্মানি”

বিশ্বকাপ দল পর্যালোচনা “জার্মানি”

Spread the love
জার্মানি
ডাক নাম: ডাই ম্যানশাফট
অঞ্চল: ইউরোপ (উয়েফা)
বর্তমান র‍্যাংকিং: ১
উল্লেখযোগ্য ক্লাব: বায়ার্ন মিউনিক, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, শাল্কে ০৪, ভেরডার ব্রেমেন, বায়ার লেভারকুসেন
জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ: লোথার ম্যাথাউস ( ১৫০ ম্যাচ)
সর্বোচ্চ গোল: মিরোস্লাভ ক্লোসা (৭১ গোল)
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ১৯ বার (২০১৮ সহ)
সেরা ফলাফল: চ্যাম্পিয়ন (১৯৫৪,১৯৭৪,১৯৯০,২০১৪), রানার্স আপ (১৯৬৬,১৯৮২,১৯৮৬,২০০২)
২০১৪ এর ফলাফল: চ্যাম্পিয়ন (ফাইনালে আর্জেন্টিনার সাথে ১-০ তে জয়)
মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা: ইউরো
অংশগ্রহণ : ১১ বার
সেরা ফলাফল: চ্যাম্পিয়ন (১৯৭২, ১৯৮০, ১৯৯৬), রানার্স আপ (১৯৭৬, ১৯৯২, ২০০৮)
ফুটবল ইতিহাস:
বিশ্বকাপে মোট ম্যাচ:১০৬ জয়:৬৬ ড্র:২০ হার:২০
বিশ্বকাপ সংখ্যায় ১টি কম থাকলেও একদিক দিয়ে ব্রাজিলকেও ছাপিয়ে গেছে তারা। আর কেউই যে ৮ বার ফাইনাল খেলিনি। এক আর্জেন্টিনার সাথেই তিন-তিনবার ফাইনাল খেলেছে তারা। ১৯৫৪ সালে তাদের প্রথম ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় “ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্স” হাংগেরির। এই হাংগেরিই গ্রুপপর্বে জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারিয়েছিল। ফাইনালেও ২-০ গোলে পিছিয়ে পরেছিল তারা। কিন্তু চিরায়ত জার্মান স্নায়ু দেখিয়ে জার্মানি শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতে ৩-২ গোলে। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচও একইরকমের উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। সেই ম্যাচ ২-৪ গোলে হেরে গেলেও হার্স্টের করা দ্বিতীয় গোলটা আজতক সাদা চোখে গোললাইন অতিক্রম করেনি বলেই মনে হয়। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত টানা তিনবার ফাইনাল খেলে জার্মানি। ১৯৮২ তে পাওলো রসির ইতালি ও ১৯৮৬ তে মারাদোনার আর্জেন্টিনার কাছে হেরে গেলেও ১৯৯০-এ আর্জেন্টিনার সাথেই শোধ তোলে জার্মানি। এবারো বিতর্ক, তবে রেফারির সিদ্ধান্ত যায় জার্মানির পক্ষে। মেক্সিকান রেফারি আর্জেন্টিনার পেদ্রো মঞ্জোন ও ক্লিন্সম্যানকে “রেস্লিং” ট্যাকলের জন্য গুস্তাভো দেজোত্তিকে লাল কার্ড দেখান। এরপর ৮৫ মিনিটে রবার্তো সেন্সিনি জার্মান ফরোয়ার্ড রুডি ভোলারকে বক্সের ভেতর ফেলে দেন। রেফারি আর্জেন্টাইন প্রতিবাদের মাঝেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান। আন্ড্রেয়াস ব্রেমে সেখান থেকে গোল করলে আগেরবার বিজয়ী মারাদোনা সেবার অশ্রুসিক্ত চোখে মাঠ ছাড়েন। ১৯৯৪ সালে সেমিফাইনালে বুলগেরিয়া ও ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েশিয়া চমকে ছিটকে পড়ে জার্মানরা। নতুন সহস্রাব্দের সবচেয়ে সফল দল জার্মানি। ২০০০ এর পরে চার বিশ্বকাপে দু’বার করে ফাইনাল ও সেমিফাইনাল খেলে তারা। ২০০২ সালে অলিভার কান এখন পর্যন্ত একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে “গোল্ডেন বল” জিতলেও রোনালদো নামক এক ব্রাজিলিয়ানের কাছে হেরে যান ফাইনালে। এরপর ২০০৬-এ ফাবিও গ্রোসো ও ২০১০-এ কার্লেস পুয়োল ছিটকে দেন জার্মানিকে সেমিফাইনাল থেকে। আর গতবার তো মেসিকে কান্নায় ভাসিয়ে গোটজার অসাধারণ গোল। মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায়ও দারুণ সফল জার্মানি। ৬ বার ইউরোর ফাইনাল খেলে ৩টি শিরোপা তাদের যার শেষটি এসেছে ১৯৯৬ সালে।
২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ফলাফল: (ম্যাচ:১০ জয়:১০ ড্র:০ হার:০ পক্ষে গোল: বিপক্ষে গোল: পয়েন্ট: ৩০
বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোল: টমাস মুলার ও সান্ড্রো ভাগ্নার ( ৫ গোল করে)
২০১৮ বিশ্বকাপ স্কোয়াড:
সর্বোচ্চ ম্যাচ: মেসুত এরজিল ও টমাস মুলার (৯০ ম্যাচ করে)
সর্বোচ্চ গোল: টমাস মুলার (৯০ ম্যাচে ৩৮ গোল)
অধিনায়ক: ম্যানুয়েল নয়্যার
স্কোয়াড ভাবনা: এবারের বিশ্বকাপে কিংবদন্তি লাম, ক্লোসা বা শোয়াইন্সটাইগারেরা নেই। অনেকের মতে এবারের জার্মান দল তাদের অভিজ্ঞতা মিস করতে বাধ্য। গত ইউরোতে ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলের হার যেন সেই আশংকাকেই সত্য প্রমাণ করল। কিন্তু ইয়োকিম লোভ এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন। তাইতো গত জুনে অনেক সিনিয়র তারকাদেরকে বিশ্রাম দেবার পরেও তরুণদের নিয়েই হেসে-খেলে কনফেডারেসন্স কাপ জেতে জার্মানি। ওই দলের অনেককেই একই মাসে হওয়া অনূর্ধ্ব -১৯ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে না খেলিয়ে মূল দলে ডাকা হয়। ওই টুর্নামেন্টেও বিজয়ী হয় জার্মানি। এই দুটি ঘটনাই প্রমাণ করে জার্মানির পাইপলাইনে কত ফুটবলার থাকে সবসময়। এমনকি যাদের যুগলবন্দীতে ফাইনালের জয়সূচক গোলটি পেয়েছিলো জার্মানি সেই শুর্লা-গোটজা ২০১৮ বিশ্বকাপের দলেই সুযোগ পাননি। এবার দলের নেতা ম্যানুয়েল নয়্যার নামক প্রাচীর। গত মৌসুমে ভাংগা বাঁ পাটা তাকে ফুটবল থেকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু সময়মতো চোট থেকে ফিরে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিততে প্রস্তুত বায়ার্ন গোলরক্ষক। তার ডেপুটি হিসেবে থাকছেন টার স্টেগেন। বার্সা ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে বেশ সমালোচিত হলেও এই গোলরক্ষক প্রমাণ করেছেন কেন তাকে নয়্যারের উত্তরসূরি ভাবা হয়। নয়্যার অবসর নিলে জার্মান গোলপোস্ট সুরক্ষিত হাতেই থাকবে। এদের সাথে পিএসজির কেভিন ট্রাপের বিশ্বকাপ রাশিয়া ভ্রমণের স্মৃতি হয়েই থাকবে। জার্মান জাতীয় দলে সবসময়ই বায়ার্ন মিউনিকের খেলোয়াড়দের আধিপত্য দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। গোলরক্ষকসহ রক্ষণভাগের ৫ জনের ৪ জনই বায়ার্নের। মাঝে থাকবেন বোয়াটেং-হুমেলস, ডানে ইয়োশুয়া কিমিচ। ইঞ্জুরির কারণে বোয়াটেং না খেললে তার বদলি ভাবা হচ্ছে সেই নিকিলাস সুলাও বায়ার্নের। ৬’৫” উচ্চতার দৈত্যাকৃতির পেশীবহুল ডিফেন্ডার শুধু শারীরক গড়নেই ভয়ংকর নন, বলেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। বোয়াটেং- হুমেলস তো সময়ের অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাক জুটি। দুজনেই যেমন দারুণ রক্ষণ সামলান, তেমনি আক্রমণে যোগ দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। আরেক তরুণ সেন্টারব্যাক রুডিগারের মূল অস্ত্র তার গতি, ট্যাক লিংয়েও দারুণ ক্ষিপ্র তিনি। বায়ে থাকছেন ইয়োনাস হেক্টর। কোলন লেফটব্যাক গত ইউরো থেকেই লোভের প্রথম পছন্দের লেফটব্যাক। ডানে কিমিচের উপর চাপটা স্বভাবতই বেশি থাকবে। তাকে যে পা গলাতে হবে ফিলিপ লামের জুতোয়। ডিফেন্সে আরো থাকছেন হার্থা বার্লিনের লেফট ব্যাক মার্ভিন প্লাটেনহার্ড ও বরুসিয়া মুনশেনগ্লাডবাকের ম্যাথিয়াস জিন্টার। জার্মান মিডফিল্ড নিয়ে কথা বলতে গেলে যার নাম সবার আগে আসবে তিনি যেন তথাকথিত জার্মান “স্টেরিওটাইপ”-এর সাথে খাপে খাপে মিলে যান। ৯০ মিনিট একই রকম যন্ত্রের মত খেলে যান, ভুল করেন খুব কমই। গোল করেও তার মুখে হাসির রেখাটা স্মিতই থাকে, পায়ের ভেতরের অংশ দিয়ে পাসের মত করে করা তার গোলগুলোও যেন বড্ড একঘেয়ে। গত বিশ্বকাপেই টনি ক্রুস নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। ভুল বলতে গেলে একটাই ছিল যার মাশুল গুনতে হতো বিশ্বকাপ দিয়ে। কিন্তু হিগুয়াইনের “বদান্যতায়” ক্রুস যেন ক্রিকেটের ব্যাটসম্যানদের মত জীবন পান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। বিশ্বকাপের পর রিয়ালে এসে তিন-তিনটি চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতা হয়ে গেছে তার। পুরনো সৈনিক আছেন আরো একজন ইয়ুভেন্তাসের সামি খেদেইরা, নয়্যারের অবর্তমানে যার হাতে অধিনায়কের বাহুবন্ধনী উঠতে পারে। মার্কো রয়েসের প্রতি ফুটবল বিধাতা যেন শেষ পর্যন্ত মুখ তুলে তাকিয়েছেন। ইঞ্জুরির খড়গে পরে বড় টুর্নামেন্ট মিস করা যে তিনি অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছিলেন। জার্মান দলে আরো একজন ইঞ্জুরিপ্রবণ প্রতিভাবান মিডফিল্ডার আছেন, যিনি কিনা আবার রয়েসের ডর্টমুন্ড সতীর্থ ছিলেন। ইল্কে গুন্ডোয়ান সারা বছর খেললে কি কি কর‍তে পারতেন তা জানার কোন উপায় নেই তবে ম্যান সিটি মিডফিল্ডার যে অল্প সময়ে মাঠে থাকেন তাতেই নিজেকে সময়ের অন্যতম গোলস্কোরিং মিডফিল্ডার হিসেবে প্রমাণ করেছেন। নেইমার আগমনে পিএসজিতে ইউলিয়ান ড্রাক্সলারের জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে গিয়ে ঠিক কিন্তু জার্মানিতে তিনি নিয়মিত মুখ। গত কনফেডারেসন্স কাপে জার্মানির অধিনায়ক ছিলেন তিনি আর তা মাত্র ২৪ বছর বয়সেই। লিওন গোরেটজকা বায়ার্নে যোগ দিয়েছেন কিছুদিন আগে, জার্মানি দলে অল্পসময়ে সৃস্টিশীলতার ঝলকও দেখিয়েছেন। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেভারকুসেন উইংগার ইউলিয়ান ব্রান্ড দলে সুযোগ পেলেও ঠাঁই মেলেনি গত মৌসুমে লিগে ১০ গোল করা লিরয় সানের। বায়ার্নের রুডি আছেন পরিশ্রমের জোরে। জাতীয় দলের প্রতি মেসুত এরজিলের নিবেদন বিতর্ক অনেক দিন ধরেই। তবে সময়মত তার পাস ঠিকই খুঁজে পায় ওঁত পেতে থাকা ফরোয়ার্ডদেরকে। টিমো ভের্নারের গতি ও গোলস্কোরিংয়ের দক্ষতা জার্মান সমর্থকদেরকে পঞ্চম বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখাচ্ছে এই মৌসুমে ৪৫ ম্যাচে ২১ গোল তার। কিন্তু অনেকের মতে লাইপজিগ স্ট্রাইকার তার অনভিজ্ঞতার জন্য ভুগবেন। অস্তমিত ক্যারিয়ারে এই জার্মান দলে সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন মারিও গোমেজ। বর্তমানে স্টুটগার্টে খেলা গোমেজ অবশ্য গোলের রাস্তাটা ভালোই চেনেন। তবে জার্মানদের সবচেয়ে বড় ভরসা টমাস মুলার। ২ বিশ্বকাপে ১০ গোল করা মুলার দেখিয়েছেন জার্মানিতে গোলমেশিন মুলার শুধু গার্ডই ছিলেন না। ক্লোসা যেমন ছিলেন টমাস মুলারও কেন জানি জার্মান জার্সি গায়ে চাপালে অসাধারণ খেলা শুরু করেন। জার্মানির সমর্থকেরাও চান এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে।
২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপ: ই
প্রতিপক্ষ: মেক্সিকো, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া
#হক_কথা
গ্রুপের কাঠিন্য: ৭.৫
গোলকিপিং: ৯.৩
ডিফেন্স: ৯.২
মিডফিল্ড: ৯.৩
ফরোয়ার্ড : ৮.০
বেঞ্চের শক্তি: ৯.১
অবস্থান: বেলজিয়ামের সাথে ১/৪ ফাইনাল। স্পেন, পর্তুগাল বা আর্জেন্টিনার সাথে সেমিফাইনাল। এরপর হয়তো ফ্রান্সের সাথে ফাইনাল। এই জার্মান দলের পুরোটা পথ যাওয়ারই সামর্থ্য আছে।
Facebook Comments