সাইফুল ইসলাম প্রলয় : তবে কি এই-ই সত্য যে নারীর না মরে মুক্তি নেই? এই প্রশ্নটি কিংবা
হাইপোথেসিসকে সামনে রেখে নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর নির্বাচিত
কলাম সাজিয়েছেন।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক
অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এই বইয়ে তিনি সমাজ এবং ধর্মে নারীর সামগ্রিক
দুরবস্থার কথা তুলে ধরেছেন প্রখর যুক্তির আলোকে। ঘরে এবং ঘরের বাইরে নারী
কীভাবে সমাজ এবং ধর্মের নিগ্রহের শিকার হন তা নিয়ে তাঁর বর্ণনা দিয়েছেন
এই বইটিতে।
নারীবাদী এই লেখকের মতে, সমাজ- ধর্ম আর পুরুষতান্ত্রিকতা নারীকে
নিয়ন্ত্রণ করছে। নারীর চালচলন, জীবনপ্রণালী সব কিছু পুরুষতান্ত্রিকতায়
হচ্ছে। তিনি মেয়েদের বহিরাবরণ নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বিজ্ঞাপনে নারীকে
কীভাবে পণ্যায়ন করা হয়ে তার একটি চিত্রও দিয়েছেন। তিনি সিনেমা-বিজ্ঞাপনে
নারীকে আকর্ষণীয় করে তোলারও তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তসলিমা নাসরিন বরাবরের মত তাঁর কলামগুলোতে ধর্মে নারীর হীন অবস্থানের কথা
তুলে ধরেছেন। তিনি হিন্দুদের পুরাণ, মুসলমানদের কুরআনসহ বিভিন্ন ধর্ম
কীভাবে নারীকে হেয় করেছে তা তুলে ধরেছেন রেফারেন্সসহ। তবে তিনি এটাও
বলেছেন যে, প্রতিটি ধর্ম সেই সময়ে নারীর অবস্থা পূর্বের চেয়ে ভালো করলেও
সময়ের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছে।
মৌলবাদীরা এবং ব্যক্তি তসলিমা নাসরিনের সমালোচকগণ তসলিমার বিরুদ্ধে যে
অভিযোগটি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন সেটি হল, তসলিমা নাসরিন “অবাধ
যৌনতা বা ফ্রি সেক্সের” প্রমোট করেন কিংবা এর পক্ষে। কিন্তু বাস্তবতা হল,
তসলিমা নাসরিন এবং তাঁর লেখা অবাধ যৌনতার বিপক্ষে। তিনি সমাজে থাকা
প্রস্টিটিউশন বা বেশ্যালয়েরও বিপক্ষে। তাঁর মতে, এতে নারীকে অবমূল্যায়ন
করা হয়। তসলিমা নাসরিন যেটা বলেছেন সেটা হল, নারীর যৌন স্বাধীনতা। যৌন
স্বাধীনতা বলতে শারীরিক সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে নারীর না বলার স্বাধীনতা।
বাধ্য না হওয়ার স্বাধীনতা।
আপনি যদি সাহিত্য বা লেখাকে ভিউজুয়ালাইজ করতে পারেন কিংবা সমাজচিত্রকে
সচেতন দৃষ্টিতে অবলোকন করে থাকেন তবে বইটি পড়ার সময় আপনার চোখে দেশের
বিভিন্ন প্রান্তের উচুতলা থেকে উচুতলার নারীদের সমাজ-ধর্ম আর
পুরুষতন্ত্রের যাতাকলে পিষ্ট হওয়ার চিত্র আপনার চোখে ভেসে উঠবে।
নারীমুক্তিতে তসলিমা নাসরিন হোক আমাদের বেগম রোকেয়া।