প্রকাশ- মাওলা ব্রাদার্স
রিভিউ – গালিবা ইয়াসমিন
কাজী নজরুল ইসলাম – ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। তিনি আমাদের জাতীয় কবি । তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে “বিদ্রোহী কবি” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। এই হচ্ছে কবির একটু পরিচয় কিন্তু আমার মনে হয় না “কাজী নজরুল ইসলাম” নাম বলার পর আরও কিছু বলার আছে কারণ তিনি আজও বাংলার প্রতিটা মানুষের মনে জীবিত আছেন ।
“কাজী নজরুল ইসলাম” এর অনেক কবিতা পড়েছি আগে কিন্তু আমি এই প্রথম তার লেখা উপন্যাস পড়লাম এবং পর্যালোচনা লেখার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। “মৃত্যুক্ষুধা” উপন্যাসটি ১৯২৭-১৯৩০ এসময়ের মধ্যে উপন্যাসটি রচিত এবং সওগাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে মুদ্রিত হয় ।
মৃৎশিল্পের কেন্দ্রভূমি কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়কের বস্তিতে মুসলিম আর খ্রিস্টান ধর্মের মানুষের বসবাস, এর কিছু ফাঁক ফোঁকরে সামান্য কিছু হিন্দু ধর্মানুসারীরাও আছে। এখানে তাদের হাঁসি-কান্না, দুঃখ-কষ্ট সব কিছু, ক্ষণে ক্ষণে তারা ভিন্ন ধর্মের হওয়ার কারণে বিশাল ঝগড়া বাঁধায় আবার সময় পার হলেই সব ভুলে যে যার কাজে মন লাগায়। বিধাতার দেয়া তাদের এতো কষ্ট যে বাকী কোন কিছুতে যেন তাদের মনোযোগ বসে না , তাদের যা আছে বিধাতা যেন তাই কেড়ে নিয়ে নেয়। আরেকটা কথা উল্লেখ্য যোগ্য যে ওই সময়ে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকরা অন্য ধর্মের মানুষদের অর্থাৎ যারা দরিদ্র তাদের খাবার দিয়ে বা খাবারের লোভ দেখিয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে বলতো। সেই বস্তিতে বাস করে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবার, পরিবারের সদস্যরা হচ্ছে – বৃদ্ধ মা, স্বামী হারা তিন পুত্রবধূ, এক ছেলে, এবং তাদের এক দল সন্তান। এই পুরো পরিবারের আহার জোগানর ভার শুধুমাত্র একজনের উপর থাকে। একবেলা খেয়ে দুবেলা না খেয়ে তাদের দিন পার হয়, এর মাঝ থেকে চিকিৎসার অভাবে বিধাতা সেজ বউ এবং তার সন্তানকে নিয়ে যায়। মেজ বৌ দু’বাচ্চার মা হওয়ার পরও তার রূপ-লাবণ্য এতো ভর পুর থাকে যে, কেউ তাকে না কুৎসিত কিছু বলতে পারে না ভালো কিছু বলতে পারে কারণ তার এ রূপ সবার মনেই তার জন্য এক মায়া মমতা সৃষ্টি করে ফেলে। অপরদিকে সমাজকর্মী, দেশপ্রেমিক, আত্মত্যাগী ও সংসার-বিরাগী এক চরিত্র হচ্ছে আনসার , যে শুধুমাত্র মানুষের দুঃখকে আগলে ধরে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে কিন্তু তার যে এতো সুখ আছে সে দিকে তার নজর কোন দিনও যায় না; তার ছোটবেলার বন্ধু বিধবা রুবির সাথে তার বিশাল দূরত্ব হওয়া সত্ত্বেও জীবনের শেষ সময়ে তাদের মিলন ঘটে। চাঁদ সড়কের সেই পরিবারটিকে দারিদ্রতা এমন ভাবে গ্রাস করে যে তা সহ্য করতে না পেরে মেজ বৌ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে বস্তি ছাড়ে। উপন্যাসের শেষ দিকটায় প্যাঁকালে এবং কুর্শি নামক দুই চরিত্রের মিলন হয় কিন্তু ওই পরিবারটির বাকী সদস্যদের কথা বর্ণনা করার মতো যেন কিছুই থাকে না।
“কাজী নজরুল ইসলাম” উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন – অর্থসংকট, শ্রেণিবৈষম্য, নগরচেতনার প্রকাশ এবং উপলদ্ধিতে সার্থক। ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসের প্রত্যেকটা চরিত্র , ঘটনা, প্রত্যেকটা ধাপ আমার কাছে অদ্ভুত রকমের সুন্দর লেগেছে। বইটা পড়ার পর থেকে ঘটনা গুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলছে-যে মানুষ আর্থিক সংকটের কাছে কতোটা অসহায়। এখনো যারা “কাজী নজরুল ইসলাম” এর লিখা ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসটি পড়েন নাই তারা বইটি সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন, এতো সুন্দর কিছু উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হওয়া ঠিক না ।
শুভ হোক আপনার পাঠ্য কার্যক্রম।
অক্ষর/মিজু
okkhorbdslideঅক্ষরঅক্ষর বিডিকাজী নজরুল ইসলামেরগালিবা ইয়াসমিনবুক রিভিউমাওলা ব্রাদার্সমৃত্যুক্ষুধা