আমার ভাঁড়ারে আছে পুরানো এক পারিবারিক রৌদ্রাগার। বহুকাল ধরে বেচতে চাচ্ছি এটা, কেউ নেয়না। দোকানদারিতে আমি অপটু, এই কথা সত্য। তবু হাল ছেড়ে দেইনি একেবারে। চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি বহুক্ষণ। সম্ভবত মায়ায় পড়ে এক রূপান্তরিত বৃহন্নলা ভদ্রমহিলা এসে হাতে তালি দিয়ে গানের সুরে সুরে সামান্য রোদ কিনতে চাইলেন। না করে দিলাম। আমায় ঘিরে গোল হয়ে আছে ট্রাফিক জ্যাম, আমি আকাশে তাকিয়ে দেখি কার্বন আর গন্ধক পুড়ে পুড়ে উড়ে যায়। ডিসেম্বর শেষ হয়ে আসে, কিন্তু শীত আসেনা এখনো শহরের বুকে। আয়োজন কিন্তু সমস্তই আছে। ফুটপাতে শিশুরা সাজ সাজ রবে উল্লাস করে, শীতের নতুন জামা পাবে বলে। গাজীপুরে ভুঁইয়া গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারীর দুই পুত্র ব্যক্তিগত বিবাদ ভুলে গিয়েছে শীত উপলক্ষ্যে,অথচ এদের সহস্র পিস সোয়েটার পড়ে আছে অবিক্রিত!বাতাসে বিষণ্ণতা আঁচ করে নিষেক ঘটিয়েছিলো কংলাক পাহাড়ের একটি কমলালেবুর পরিবার। শুধু শীত এলোনা বলে অকালে গর্ভপাত হয়ে গেলো। গোলাপি গাজর আর সবুজ বাঁধাকপির দল পরিমিত পুষ্টি আর ঠাণ্ডা না পেয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছে। কারওয়ান বাজারে এদের দাম মুক্তিবেগ অতিক্রম করে আকাশ ছুঁয়ে যাবে শীঘ্রই। বিশেষজ্ঞের মতো এইটাই। অনেকগুলো মাংসল মোরগ অপেক্ষায় ছিলো আসছে শীতে কাবাব হবে ভেবে। কই? কোথাও কোন বার্বিকিউয়ের ঘ্রাণ তো পাইনা! পামিস্ট হলে শহরের হাতের রেখা দেখে বলে দিতাম, ক্রাচে ভর দিয়ে কোথায় চলে গেলো শীত। উষ্ণতার উদ্যান বসে আছি এই নিশাচর নগরীতে। কে নেবে স্বচ্ছল রৌদ্র?
শীতার্ত রৌদ্র ।। মোঃ আসাদ হাসান

Spread the love
Facebook Comments