মাওলানা আবদুল্লাহ মাসরূর
আলেম, লেখক
সনদের বা সূত্রের প্রেক্ষিতে হাদিসে ‘কালাম’ থাকলে ও বর্ণিত হাদিস পরিত্যক্ত ও বর্জনীয় নয় । “যয়ীফ” – দুর্বল ও “মাউযু” – জাল হাদিস এক নয় । জ্ঞাতব্য যে, হযরত আলী রাঃ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটিকে ‘যয়ীফ’ বলতে পারেন তবে “মাউযু” বা জাল হাদিস বলা যাবেনা ।জাল ও যয়ীফ হাদিস আদৌ এক নয় । স্বরচিত মনগড়া মিথ্যা বক্তব্যকে রাসূলের হাদিস বলে চালিয়ে দেয়া, এটা হচ্ছে জাল হাদিস।তা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য, কোন ক্ষেত্রেই তা প্রমাণ হিসেবে আদৌ পেশ করা যাবেনা ।যে হাদিসে “হাসান” হওয়ার শর্তাবলী সম্পূর্ণ ভাবে বা আংশিক ভাবে বিদ্যমান নেই সেটাকে “যয়ীফ ” হাদিস বলে ।”যয়ীফ” হাদিস শর্তসাপেক্ষে গ্রহণীয় ও আমল যোগ্য । শর্তাবলী নিম্নরূপ :
এক, যে “যয়ীফ” হাদিসের দূর্বলতা দূরীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এরকম যয়ীফ হাদিস দ্বারা দলীল দেওয়া যায় । এ ব্যাপারে হাদিস শাস্রবিদদের ঐকমত্য রয়েছে ।
দুই, “যয়ীফ” হদিস যদি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয় অর্থাৎ তার ‘মুতাবে’ বা ‘শাহেদ ‘ সমর্থন পাওয়া যায় ।তিন, হাদিসটি দ্বারা কোন মুজতাহিদ প্রমাণ পেশ করে থাকেন।
চার, হাদিসটি যদি কুরআনের কোন আয়াতের ভাবার্তের অনুকূলে হয়
পাঁচ, হাদিসটি যদি দ্বীনের স্বীকৃত কোন মূলনীতির অনুকূলে হয় ।
ছয়, হাদিসটি যদি কোন মুহাদ্দিস কর্তৃক বর্ণিত হয় এবং কোন হাফেজে হাদিস সেটিকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন
সাত, অথবা ব্যাপক ভিত্তিতে লোকেরা হাদিসটিকে গ্রহণ করে থাকেন
আট, যদি হাদিসটির সমর্থনে এমন কোন ইশারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যা দ্বারা হাদিসটি সহীহ হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায় । ইত্যাদি কারণে “যয়ীফ” হাদিসের উপর আমল করা যায় ।(সূত্র : কাওয়ায়িদ ফি উলুমিল হাদিস, যফর আহমদ উসমানী, তাদরিবুর রাভী , ইবনে হাজার আসকালানী , আননুকাত , বদরুদ্দীন যারকাশী , আননুকাত আলা মুকাদ্দিমাতি ইবনিস্ সালাহ ।)
“শবে বরাতের” হাদিসে আলোচিত সকল ইতিবাচক শর্ত পাওয়া যায় বিধায় এ রকম হাদিস কে ‘মউজু’ বলা যাবেনা এবং ‘যয়ীফ’ বলে আমল পরিত্যাগ করা যাবেনা । আধুনিক হাদিস বিশ্লেষকদের নিকট স্বনির্বন্দ্বন আরজ হচ্ছে যে, এত রুক্ষ, রূঢ় ও অগ্নিগর্ভ ভাবে হাদিসের ব্যাখ্যা করা কাম্য নয় । মুসলিম উম্মাহর আত্মিক উৎকর্ষতা সাধন সামনে রেখে রাসূল সাঃ এর কথা কাজ ও অনুমোদন কে মর্মস্পর্শী ভাবে, ধর্মীয় অনুভূতির শিল্পিত তুলি দিয়ে আবেদনময় করে লোক সম্মুখে উপস্হাপন করা অতীব জরুরী ।
স্মর্তব্য যে হাদিসের রাভী, বর্ণনা কারীদের “জারাহ” তাদিল” নির্ভরযোগ্যতা অনির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ের মূলনীতি অবলম্বন করা আবশ্যক ।অযথা বাড়াবাড়ি অথবা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই হাদিসের বর্ণনাকারী সম্পর্কে সমালোচনা করা, জাহান্নামে যাওয়ার লক্ষণ । প্রণিধান করুন , ইমাম ইবনে দাক্বিকুল ঈদ, কী বলছেন : মুসলমানদের ইজ্জত, সম্মান জাহান্নামের গর্ত হতে একটি গর্ত, যাঁর কিনারায় দু’ধরণের মানুষ দাড়িয়ে আছেন ।এক, মুহাদ্দিসীনে কেরাম, দুই, বিচারকগণ ।( লামহাতুন মিন তারিখিস্ সুন্নাহ্ আব্দুল ফাত্বাহ আবুগুদ্দাহ )
ইলম আমলের অন্তঃসারশূন্য এ কংকাল দেহে তাকওয়া ও খোদা ভিরুতার প্রাণসন্চার করা সময়ের দাবী । এ ভাবেই জরাগ্রস্ত সমাজে নবযৌবনের অঙ্কুর উদগত হওয়া আশা করা যাবে ।অন্যতায় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের নামে দেখা দিবে আমলের প্রতি অনীহা ।মানুষের গাড়ের উপর চেপে বসবে শায়তানিয়্যাত ও শাদ্দাদিয়্যাতের অভিশপ্ত বোঝা । ” এ নবযোগ আনিবে জরার বুকে নব যৌবন ” প্রাণের প্রবাহ ছুটিবে জড়তার বন্ধন ” ( নজরুল )