শত জনমের প্রেম
খোলা বারান্দায় তুমি বসে থাকবে চুল ছেড়ে চেয়ারে। পাশেই গরম হাই উড়বে কফির মগে। চা সেটা তোমার পছন্দ না একেবারেই। কফির মগে চুমুকের সাথে সাথে স্মৃতিচারণ করবে তুমি।
‘আচ্ছা! তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম দেখার কথা? তুমি একটা কালো টুপি পড়ে এসেছিলে,পড়নে ছিলো একটা পাঞ্জাবী? প্রথম প্রথম দেখে নাক সিটকাচ্ছিলাম মনে মনে। প্রথম দিন খুব হেসেছিলাম জানো তো? এত্তো কথা বলতে পারে মোল্লাটা? পেছন পেছন হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম কথাটা। এতো দ্রুত হাঁটতে তুমি, দু-দু’বার হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন।
সবসময় লেগেছিলো হাসিটা তোমার ঠোটে। দেখে খুব ঈর্সা হচ্ছিলো আমার। এত্তো হাসে কিভাবে? জানো তো! যখন তুমি কথা বলছিলে,তখন আমি মাথা নেড়ে নেড়ে বোকার মতো তাতে সম্মতি প্রকাশ করছিলাম। আসলে তখন আমি তোমার কথা মোটেও শুনছিলাম না। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে তোমার দু’ঠোটের আলিঙ্গন দেখছিলাম।
তোমার বন্ধুগুলো কেমন জানি ছিলো। আমি যখন প্রকাশনীর সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্যে,তখন ওরা ঈশারাতে কিছু একটা বুঝাচ্ছিলো আমায়। এরই মধ্যে তুমি এসে পড়েছিলে। না হলে হয়তো আরো কিছু বুঝাতে বা বলতে চাইতো ওরা। সাঁয় না পেয়েও হয়তো তেমন কিছু বলার সাহস মিলেনি ওদের। পরে যখন তুমি ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলে,তখন লজ্জায় ওরা আমার দিকে মোটেও তাকায়নি একটুখানি।
সেদিন তুমি সৌজন্য কপি না নিয়ে টাকা দিয়ে বই কিনেছিলে আমার। ‘লেখকের স্বার্থকতা কেনাতে,সৌজন্য কপিতে না’ এমন শ্লোগান দিয়ে মুগ্ধ করেছিলে তৎক্ষনাৎ। হাতের লেখা মোটেও ভালো ছিলো না আমার। তার উপরে তুমি সামনে। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। অনেকখানি সাহস যোগিয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলাম। বারবার আমার লেখা দেখতে চাচ্ছিলো উঁকি মেরে লুকিয়ে। এভাবে দেখবেন না প্লিজ! বলেছিলাম আমি। তবুও তুমি দেখছিলে। দেখতে হয় না এগুলো এসময়ে,বলে ক্ষ্যান্ত করছিলাম তোমায়। লজ্জায় না ফেলে সমস্যা নেই হাতের লেখাটা না হয় আমিই শিখিয়ে নেবো বলে সঙ্গ দিচ্ছিলে তুমি।
সেদিন কফি খাওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসায় চলে যেতে হয়েছিলো আমার। বিদায়টাও নিতে পারিনি। বাসায় আসার পর ফোন করেছিলে তুমি। ফটোগ্রাফ নেওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছেতে ভুগছিলে। বুঝতে পেরেছিলাম আমি। কিন্তু জানো তো! মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটেনা। পরের হপ্তাহে আসবো এবং তখনই হবে সে পর্ব বলে আশা দিয়েছিলাম তোমায়। তাই বলে তোমার কোনো অভিযোগ বা অভিমান ছিলো না আমার উপর।
অল্প সময়ের মধ্যেই তুমি আমার ভেতরটাতে কেমন জানি একটা জানান দিচ্ছিলে। ভালোলাগার জানান। একটা তুফান তুলে দিচ্ছিলে। ভালোবাসার তুফান। সত্যিই অদ্ভুত একটা মানুষ তুমি। তোমায় ভালোবেসে ধন্য হয়েছি আমি।