শুক্রবার, মার্চ ৩১, ২০২৩
Home > গল্প > মশাওমানুষের যুদ্ধযাত্রা ।। তন্দ্রা তাবাস্সুম

মশাওমানুষের যুদ্ধযাত্রা ।। তন্দ্রা তাবাস্সুম

Spread the love

মশা একটি পতঙ্গ এবং বৃহৎ অার্থোপডা পর্বের শ্রেণীভুক্ত। সংখ্যাও তারা অনেক বেশি, মশারা দল বেঁধে থাকে তাদের দলে একটা দলও নেতাও থাকে সকল মশারা সেই নেতার কথা মেনে চলে,মশাদের জীবনকাল অনেক ক্ষুদ্র এবং তাদের জন্মহার অনেক বেশি,মশারা দল বেঁধে চলে কারণ তাদের জীবনকাল অল্প সময়ের তারা যেন বিলুপ্ত হয়ে না যায় এজন্য তারা দল বেঁধে থাকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিখিয়ে দিয়ে যায় সেই প্রজন্ম অাবার তার পরবর্তী প্রজন্মকে শিখায় এভাবে চক্রাকারে মশারা পৃথিবীতে অাধিপত্য গড়ে তুলেছে, একটা মশা সপ্তাহে ৩০০-৪০০ লার্ভা ত্যাগ করে লার্ভা পরিপূর্ণ হয়ে ডিমে পরিণত হয় ডিম থেকে বাচ্চা মশা দুই দিনেই পূর্ণাঙ্গ মশা হয়ে ওঠে, পৃথিবী জুড়ে সব জায়গায় দলে দলে এই মশা বিরাজ করে,একদিন এক দলের মশার দল নেতার মাথায় এল অামরা মশারা সংখ্যায় বেশি পৃথিবীতে অামাদের অাধিপত্য ও বেশি সব জায়গায় অামরা রাজ্য জুড়ে দিতে পারি যেমন গাছের ডালে,মাটিতে,পুকুরে, নদীতে,ডোবা-নালায়,মানুষতো সুবলিত বাড়ি বিছানা সারা থাকতে পারে না। মানুষ মশাদের থেকে সংখ্যায় কম হয়েও যে কোনো জায়গায় অবস্থান করতে না পেরেও কেন মানুষেরা পৃথিবীতে রাজ্যত্ব করবে? মানুষের বিরুদ্ধে অামি এই মশার দলের দল নেতা হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম তোমরা অামার দলের মশারা যে যেভাবে পারো পৃথিবীর সকল মশাদের জানিয়ে দাও, পৃথিবীতে রাজ্যত্ব করবো অামরা মশাদের দল। মানুষেরা সংখ্যায় কম ওদের অামরা পৃথিবী থেকে নিঃচিহ্ন করে দেব।মশারা ভাবলো শুধু দংশন করে রক্ত চুষে ওদের শেষ করা যাবে না,মানুষের শরিরে ভাইরাস পয়োজন বিষাক্ত বিষ দিতে হবে। মশাদের লালায় হালকা টক্সিক থাকে এটা খুব সামান্য,মশাদের দলো নেতা সকল মশাদের অাদেশ করলো তারা তাদের সকল টক্সিক একস্থানে জমা করবেন।সবার টক্সিক একসাথে বিষাক্ত ভাইরাস জন্ম নিল। জমাকৃত টক্সিক পান করলো মশাদের বংশধরেরা সেই থেকে উৎপন্ন হলো ম্যালেরিয়া এনোফ্লিস মশকীবাহিত এক ধরনের মারাত্মক জ্বররোগ। ম্যালেরিয়ার প্রজাতি পরজীবীর বৃদ্ধি ঘটাতে লাগলো, ম্যালেরিয়ার পরজীবী চারটি ধাপে বিভক্ত হয়েছে,চারটি ধাপের রোগের নাম ম্যালিগন্যান্ট টারশিয়ান ম্যালেরিয়া,কোয়ারটান ম্যালেরিয়া, বিনাইন টারশিয়ান ম্যালেরিয়া, মৃদ টারশিয়ান ম্যালেরিয়া, এই রোগ গুলোর সৃষ্ট জ্বরের প্রকৃতি সুপ্তাবস্থানকাল ভিন্ন ভিন্ন। মশারা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য তাদের সর্বচ্চো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,মানুষও বসে নেই তার বুদ্ধি,জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে রোগের প্রতিকার ও প্রতিষেধক অাবিষ্কার করে নিচ্ছে, যে ভাইরাসে রোগ ছড়াচ্ছে সেই ভাইরাসের বিপরীতে বিষাক্ত ভাইরাসকে ভক্ষণ করতে পারে এমন এ্যান্টিভাইরাস দিয়ে এ্যান্টিবায়োটিক ঔষুধ প্রতিষেধক টিকা অাবিষ্কার করে নিয়েছে মানুষ। মশা নিধনের পদক্ষেপ নিল মানুষ, ধোয়া সৃষ্টি করে মারা হল, লার্ভা ও পিউপা ধ্বংসসাধন করা হলো কিছু বিশেষ কীটনাশক দিয়ে।মশা স্যাঁতসেঁতে মাটিতে,জলাশয়ে লার্ভা ও পিউপা ছড়িয়ে দেয়।যেসব জলাশয়ে মশকী ডিম পাড়ে সেখানে কেরোসিন তেল,পেট্রল জাতীয় তেল ছিটিয়ে লার্ভা পিউপা ধ্বংস করা হলো,এতে মশা নিধন হলেও পানি দূষণ হতে লাগলো যা মানুষের জন্য ধ্বংসের বার্তা বহন করে। তাই এই প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে, কই,খলসে,তেলাপিয়া জাতীয় লার্ভা খাদক মাছ চাষ করে লার্ভা ও পিউপা ধ্বংস করা সম্ভব এবং এই প্রক্রিয়ায় দুইদিকেই মানুষ লাভবান।মশাও থেমে নেই একের পর এক বিষাক্ত পরজীবী অানতে লাগলো ডেঙ্গু অারো সব ভয়ংকর জ্বররোগ। মানুষের অাবিষ্কার দেখে মশারা যতোটা চিন্তিত ঠিক ততোটাই অানন্দিত কারণ মানুষ মশা নিধনের জন্য অাবিষ্কার করে কয়েল,অারাসোল, কীটনাশক ঔষুধ,সালফার ডাই-অক্সাইড গ্যাস যা মানুষের অায়ু কমানোর এবং অারো রোগ শরীলে বাসা বাঁধার মূলমন্ত্র এই দেখে মশারা মহাখুশি।মশারা বলাবলি করছে মানুষ তার নিজের জীবনকাল নিজেই কমাছে এটা অামাদেরই জয়ের লক্ষণ অামরা মশারা অাপন মনে নতুন পরজীবী সৃষ্টি করে যাই।মশারা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হাল ছাড়েনি মানুষের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে কোনো একসময় পৃথিবীতে তাদের রাজ্যত্ব চলবে এই স্বপ্নে, এবার তাদের নতুন রোগ চিকনগুনিয়া। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এই ভাইরাস প্রথমে লিভার তারপর পর্যায়ক্রমে তাদের জীবনকাল ধাপে ধাপে শেষ করে রক্তে ছড়াতো অার চিকনগুনিয়া হচ্ছে হাড় মুড়মুড়ানি রোগ হাড়ের যন্ত্রণা হয় এই কষ্ট মশা মানুষকে দিতে পেরেছে।মানুষ সৃষ্টির সেরা,মানুষতো হার মানবে না চিকনগুনিয়ার ঔষুধ,প্রতিষেধক চিকিৎসা অাবিষ্কার করে নিবে।মশা সে তো পতঙ্গ,লার্ভা রূপান্তরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে লার্ভাকে পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গে পরিণত করে,মশা যেমন অজৈব প্রক্রিয়া বংশ বিস্তার করে মানুষ তার বিপরীতে জৈব প্রযুক্তিতে জুভেলাইন হরমোন উৎপন্ন করে মশকীর লার্ভাকে চিরকাল লার্ভা করে রেখে দিবে।মানুষ অাবার তার শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়ে পতঙ্গের কাছে জয়ী হবে।

লিখা:কল্পনা  ।

Facebook Comments