বই – ওঙ্কার
লেখক -আহমদ ছফা
রিভিউ : সাদিক আহমেদ
প্রচ্ছদ- মামুন কায়সার
প্রকাশনী -স্টুডেন্ট ওয়েজ
ধরণ – মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
গ্রামের মানুষ টু শব্দ করলে বাবা সহ্য করতে পারতেন না। সাধারণ মানুষের উপর জ্বালা মেটাতে তিনি যখন তখন আদালতে ছুটতেন। এ ব্যাপারে আবু নসর মোক্তার সাহেব ছিলেন ডান-বাম দুই হাত এবং বুদ্ধি বিবেচনার একখানি নির্ভরযোগ্য আড়ত। মোকাদ্দমার দিন এলে বাড়িতে উৎসবের ধুম লেগে যেত। মুরগির পোলাও হত, খাসি জবাই হত। পাঁচ-সাতজন মোল্লা সারাক্ষণ মুখে ফেনা ছুটিয়ে কুরআন পাঠ করত।
আমার বি.এ পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে এমন সময় চূড়ান্ত দু:সংবাদ শুনলাম। বাবা হাইকোর্টের মামলায় গরু হারা হেরেছেন। বাবার প্রিয় আবু নসর মোক্তার সাহেব মামলার খরচ ডিগ্রি পেয়েছেন। যেহেতু আমাদের ঋণ পরিশোধ করার মত টাকা নাই, সেহেতু মোক্তার সাহেব আদালতে বাড়ি, হাজা পুকুর, জমা দিঘী সব নিজের নামে নিলাম করিয়ে নিয়েছেন।
মোক্তার সাহেবকে এখন থেকে শ্বশুরই বলব। আবু নসর মোক্তার সাহেব আমাকে শুধু তার বোবা মেয়েকে দিলেন না। হতাশা লাঞ্চিত পূর্বপুরুষের জীর্ণ অট্টালিকা টেনে ঝলমল করা শহরে এনে বসালেন।
প্রতিদিন অফিস শেষ করে বাসায় আসি।বোবা স্ত্রী আমাকে দোরগোড়ায় দেখলেই অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে ছুটে আসে। জুতোমুজো খুলতে সাহায্য করে। জামা কাপড় ছাড়াতে হাত লাগায়। সাবান তোয়ালে এগিয়ে দেয়।
দেশের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছিল। যেখানে দেশের গভীর ব্যথা, মার্শাল সাহেবের গোমড়ামুখো সৈন্যরা সেখানেই কাঁটা বসানো বুট জুতোর লাথি মারে।
এই সময়ে বৌটির একটি সংশোধনের অযোগ্য ত্রুটি আমার চোখে ধরা পড়ল। মিছিলের ঘ্রাণ পেলেই দরজা-জানালা খুলে রাখে। শুনেছি বোবারা কানে খাটো। তবে কী করে এমন ব্যাপার ঘটে তা আমি বলতে পারব না। মিছিল আসলেই কান পেতে শোনার চেষ্টা করে।
সেদিন আমাদের বাড়ির দিকে বাঁধ ভাঙা শ্রোতের মত মিছিল এগিয়ে আসছিল।চারপাশে একটা নতুন উদ্দীপনা। হঠাৎ করে উপলব্ধি করলাম বোবা স্ত্রীর আওয়াজের ধাচটা দ্রুত পালটে যাচ্ছে। সে প্রাণপণ কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাকযন্ত্র কাজ করছে না। আমি মেঝেতে ছোপ ছোপ টাটকা লাল রক্তের দিকে তাকাই। নিজেকে প্রশ্ন করি, ‘কোন রক্ত বেশী লাল, শহীদ আসাদের না আমার বোবা বৌয়ের?’
পাঠক ভাবনাঃ
“এ গ্রন্থটি পাঠ করলে যেকোন সুহৃদয় পাঠকই মোহিত হবেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচণ্ড আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ে এর চাইতে উৎকৃষ্ট কিছু কোথাও লিখিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।” কথাটি আমার নয়, আবুল ফজল সাহেবের। বইয়ের প্রথম পৃষ্টায় যা মুদ্রিত আছে।
আবুল ফজলের মত ব্যক্তির এমন মন্তব্যের পরে আমার মত সাধারণ পাঠকের মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তারপরও বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাসটি অন্যান্য সাধারণ উপন্যাস থেকে আলাদা। এখানে প্রকাশিত হয়েছে একজন বোবা বৌয়ের দেশের প্রতি প্রচণ্ড আবেগ ও ভালোবাসা।
দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে সে তার প্রাণ দিয়েছিল অভিনব কায়দায়। তার ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তার অভিনব ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে।
আবুল ফজলের মত ব্যক্তিরা বই থেকে নতুনত্বের স্বাদ গ্রহণ করেছেন। আশা করি আপনাদেরও অনেক ভাল লাগবে।