Saturday, June 10, 2023
Home > বই আলোচনা > বুক প্রিভিউ “ইচ্ছে হলে ছুঁয়ে দিয়ো বেপরোয়া রোদ্দুর”

বুক প্রিভিউ “ইচ্ছে হলে ছুঁয়ে দিয়ো বেপরোয়া রোদ্দুর”

Spread the love

বইয়ের নাম : ইচ্ছে হলে ছুঁয়ে দিয়ো বেপরোয়া রোদ্দুর
লেখক : এ বি এস রুমন
প্রকাশক : বদরুল মিল্লাত
প্রিভিউ : মো: সেলিম রেজা
বিষয় : রোমাঞ্চকর সামাজিক
ধরণ : উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ : নভেম্বর ২০১৮
পৃষ্ঠা  : ১২৮
মুদ্রণ মূল্য : ২৫০ টাকা
প্রি- অর্ডার মূল্য : ১৫০ টাকা ( ৪০% ছাড়ে)
প্রকাশনী : নহলী বুকস

ভূমিকা:
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছিলেন নামে কিবা আসে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নামে অনেক কিছুই আসে যায়। কারণ “ইচ্ছে হলে ছুঁয়ে দিয়ো বেপরোয়া রোদ্দুর – উপন্যাসের এই চমৎকার নামটিই আমাকে প্রথম আকৃষ্ট করেছিল বইটি পড়ার জন্য। কেননা এই নামের মধ্যে ছিল নতুন জীবন দৃষ্টিভঙ্গি, একটি অভিনব রুচি, চেতনার এক নতুন আকাশ উকি দিচ্ছিল। অবশ্য এর আগে শিরোনামহীন ব্যান্ডের গানের একটা লাইন আমার খুব প্রিয় ছিল-
“ইচ্ছে হলেই এনে দিতে পারে বেপরোয়া রোদ্দুর ঝলমল দিন.. ” সেটাও বইটির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ। এ বি এস রুমন একজন নবীন লেখক তো বটেই, নামটিও আমার কাছে অপরিচিত ছিল। তবুও বইটির প্রকাশকের দেয়া পিডিএফ পড়তে শুরু করলাম শুধু বইটির নামের মোহে। কিন্তু বইটি পড়ে অভিভূত হলাম। উপন্যাসে সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম একজন সূক্ষদর্শী শিল্পীর, একজন কুশলী স্রষ্ঠার পাকা হাত। একজন দক্ষ রুপকার, একজন প্রজ্ঞাবান দ্রষ্টার জন্মলগ্ন যেন অনুভব করলাম। কথায় বলে রতনে রতন চেনে- স্বনামধন্য লেখক, প্রকাশক বদরুল মিল্লাতের চোখে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন এই নবীন লেখকের লেখা। তারই ফলশ্রুতিতে এই বই।

লেখক পরিচিতি:
অংকের ছাত্র এ বি এস রুমন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। জন্ম কুষ্টিয়া জেলায় বটতৈল এলাকায়। ছোটবেলা থেকে লেখালেখি করলেও এটা ছিল তার প্রথম উপন্যাস। তার মধ্যে কবি কবি একটা ভাবও আছে । এই উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন তার নিজের লেখা কিছু অসাধারন কবিতা। এখন তাকে লেখক বললেও বইটি প্রকাশের পর তিনি ঔপন্যাসিক এ বি এস রুমন নামেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যাবেন বলে আমার ধারণা।

কাহিনী সংক্ষেপ :

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র রাশেদ। ভালোবাসতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বেলা নামের একটি মেয়েকে।
হঠাৎ এক সড়ক দূর্ঘটনায় রাশেদের বাবা- মা দুজনেরই মৃত্যু ঘটে। একমাত্র ছোট ভাই রোদ। ছোট ভাইকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় রাশেদ। বেকার অবস্থায় বিয়ে করে ফেলে বেলা আর রাশেদ। বড়লোক বাবা ইরাজুদ্দিনের একমাত্র মেয়ে বেলা। স্বাভাবিকভাবেই এ বিয়েটা মেনে নিতে পারে না বেলার বাবা। যেমন মেয়ে তেমন বাবা। জিদ্দি বাপের জিদ্দি মেয়ে। বেলাকে বিয়ে করার পর ভালবাসাটাই ছিল রাশেদের মুলধন। প্রচণ্ড ভালোবাসা দু’জনের। ফুলের বাগানে ছুটাছুটি।

এদিকে রাশেদের ছোটভাই রোদ উঠতি কবি, ভালোবাসে পাশের বাসার হিন্দু মেয়ে মায়াকে। ছোটবেলা থেকে একসাথে বেড়ে উঠা। মেলামেশা রূপান্তরিত হয় ইস্পাত কঠিন ভালোবাসায়। রোদের ভালোবাসার উত্তাপ ছিল প্রখর। কোনো এক সুন্দর বিকেলে আবেগের বশে রোদের ঠোঁটে চুমু খায় মায়া। দুর থেকে দেখে ফেলে ইলা মিত্র, মায়ার মা। শুরু হয় ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি। রোদ আর মায়া কি এক হতে পেরেছিল? বিয়ে হয়েছিল কি ওদের? জানতে হলে বইটি অবশ্যই পড়তে হবে আপনাকে।

আবীর, রাশেদের বন্ধু। প্রায় দুই যুগ আগে থেকে ওরা এক সাথেই আছে। মায়ার মা ইলা মিত্র আবীরকে নিজের ছেলের মতো বড় করেছে। অদ্ভুত একটা চরিত্র এই আবীর। সব সময় গম্ভীর থাকলেও কৌতুক করে কথা বলে। ছোটবোন মায়ার সাথে সারাক্ষণ খুনসুটি। ওর কাছে রোদ হচ্ছে মায়ার ম্যাথমেটিশিয়ান। সবাই ভালোবাসে আবীরকে। আবীরও ওদের ভালোবাসার দ্বিগুন ফিরিয়ে দেয়।
এভাবে ভালোই চলছিল। এক সময় রাশেদ অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশে দাড়ায় বন্ধু আবীর। নিজের সব কিছু উজার করে দেয় বন্ধুর জীবন বাঁচাতে। কিন্তু কে এই আবীর? ওর জন্ম পরিচয় কি? কোথায় থেকে এসেছিল? হিন্দু না মুসলিম? সম্পূর্ণ বইয়ের কোথাও আবীরের পরিচয় না থাকলেও উপন্যাসের একেবারে শেষভাগে লেখক এই রহস্যটা প্রকাশ করে। কি ছিল সেই পরিচয়? জানতে হলে পড়ুন, “ইচ্ছে হলে ছুঁয়ে দিয়ো বেপরোয়া রোদ্দুর” উপন্যাসটি।

উপন্যাসে ব্যবহূত চরিত্র : রাশেদ, বেলা, রোদ, মায়া, আবীর, ইরাজুদ্দিন, হেলাল, ইলা মিত্র, সাঁঝ এবং মেঘ।

মন্তব্য এবং আমার বিশ্লেষণ :

নহলী প্রকাশনী থেকে এই নভেম্বরে প্রকাশিতব্য বইটি ছন্দময় শব্দচয়নে, ও বিষয় প্রকরণের নতুনত্বে আমাদের বাংলা উপন্যাসে এক ভিন্নমাত্রা নিয়ে আসতে চলেছে। উপন্যাসটি পড়ার সময় অন্য রকম এক আকর্ষণ বোধ করেছি। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে লেখক বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে। চমৎকার প্লটে একটি পরিবারের কাহিনীর ভেতরের কাহিনী উঠে এসেছে উপন্যাসটির পরতে পরতে। বইটি পড়ার সময় লেখক রুমনের পাশাপাশি আমি হেটেছি, পুরো ঘটনা নিজের চোখের সামনে দেখতে পেয়েছি। সংলাপ গুলো ছিল চমৎকার। বইটি পড়তে গিয়ে আপনি পাবেন পূর্ন দৈর্ঘ্য সিনেমা দেখার স্বাদ। গল্প শুধু পড়বেনই না, নিজের কল্পনায় দেখতেও পাবেন। বইটির শুরু থেকেই লেখার ঢং আমাকে মুগ্ধ করেছে। পড়ার সময় একবারও মনে হয়নি এটি একজন নবীন লেখকের উপন্যাস। লেখা প্রান্জল ভাষায় এবং সহজ বোধগম্য ছিল।
অদ্ভুত উপস্থাপনশৈলী, সাবলীল এর প্রকাশভঙ্গি। বইয়ের ঘটনাগুলো মন ছুঁয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য রাখে। একটু অন্য ধরণের জীবনের ছবি পড়তে চাইলে এই বইয়ের বিকল্প নেই। সাধারণ উপন্যাস গুলো থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন এটি। এক কথায় অসাধারণ।
সব মিলিয়ে উপন্যাসটি আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। বাকী টুকু আপনারা পড়লেই বুঝতে পারবেন। বই কিনুন, বই পড়ুন এবং প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।

Facebook Comments