ফাহাদের নাকের ডগায় শিশিরবিন্দুর মতো ঘাম জমে গেছে। চোখমুখ কেমন লালচে আকার ধারণ করছে। ভয়ে কাঁচুমাঁচু হয়ে জেলের এক কোণে বসে আছে সে। বিকেল পাঁচটা ছুঁইছুঁই, এখনো ইনস্পেকটর অপূর্ব চৌধুরী আসার নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই। গলা শুকিয়ে গেছে ফাহাদের। জেলের বাহিরে পাহারারত হাবিলদার রুস্তম আলির কাছে এক গ্লাস পানি চাইল ফাহাদ। রুস্তম আলি ফাহাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়েও কিছু বলল না। প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে ওর। সেই সকালে আলু ভর্তা, এক প্লেট ভাত সাথে পোড়া পোড়া গন্ধ মিশ্রিত ডাউল দিয়েছিল। আবার কখন খাবার দিবে তাও জিজ্ঞেস করতে পারছে না। হাবিলদার রুস্তম আলির ভয়ঙ্কর চাহনি দেখেই ফাহাদের বুক কেঁপে ওঠে। শ্যামলপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হঠাৎ করেই হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। বুঝতে বাকী রইল না যে, ইন্সপেক্টর অপূর্ব চৌধুরী এসে গেছেন। কনস্টেবল রফিক হায়দার দৌড়ে এসে ফাহাদকে বলল দেখো চান্দু তোমার জম আইসা পরছে। যা করছো সব সত্যি সত্যি বলে দিবা। স্যার কিন্তু মিথ্যা কথা পছন্দ করেন না। ফাহাদ কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু, গোঁফওয়ালা রফিক হায়দার তাকে বলার সুযোগ দিল না। অকথ্য ভাষায় গালি জুড়ে বলল চুপ কর বেডা! স্যারের পেঁদানি খাইলে সব ঠিক হইয়া যাইব। অপূর্ব চৌধুরী জেলের ভেতর প্রবেশ করলেন। ফাহাদের আষ্টেপৃষ্ঠে চোখ বুলিয়ে নিলেন একবার। হাতে মোটা একটা লাঠি হাত দ্বারা ঘুরাচ্ছেন। জেলের ভিতরে রাখা টেবিলটায় দপাস করে বসলেন অপূর্ব চৌধুরী। মোটা লাঠিটা মাটির সাথে ঠেক লাগিয়ে গলা খাকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। নাম কী তোর? ফাহাদ অবনত মস্তকে বললেন ফাহাদ হাসান। মা-বাবা কোথায় থাকে? মা-বাবা নাই। কোন আত্মীয়স্বজন নাই? না। থাকিস কোথায়? শাহজাহানপুর। খুনির সাথে তোর পরিচয় কিভাবে? ফাহাদ এবার নড়েচড়ে বসল। দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল স্যার খুনির সাথে আমার কোনো পরিচয় নাই। আর আমি জানিও না কে খুন হইছে! তাহলে, খুন হওয়ার পরদিন রাতে তুই সেই জায়গায় ঘুরঘুর করছিলি কেন? ফাহাদ বলল স্যার প্রতি রাতেই আমার ঘুরার অভ্যাস। দিনেরশ্রম, কোলাহল আর বিচিত্র মানুষদের থেকে আমি সবসময় আলাদা থাকতে চেয়েছি। সে কারণেই মানুষজন আর পশুপাখিগুলো যখন ঘুমিয়ে পড়ে ঠিক তখনি আমি প্রাকৃতিক স্বাদ উপভোগ করার জন্য বের হই। আর স্যার ফারিয়ার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর আমি আরো বিমর্ষ হয়ে পরেছিলাম; সে কারণে সেরাতে একটু বেশীই হাঁটাহাঁটি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! কোথ্থেকে কোথায় নিয়ে আসল! হা হা হা করে হেসে উঠল রফিক হায়দার। হাসতে হাসতে বলছে স্যার ঐ কবি হওনের ভাব ধরতাছে রফিক হায়দার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কিরে তুই কবি? আবারো অট্টহাসিতে মেতে ওঠে রফিক হায়দার। অপূর্ব চৌধুরী মনযোগী হয়ে সব শুনছিলেন। এবার জিজ্ঞেস করলেন ফারিয়া কে? ফাহাদ একরাশ দুঃখ বুকে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল স্যার বড়লোকের কায়কারবার। যখন যাকে মন চাবে তাকে দুঃখ দিবে। কয়েকদিন আমোদ ফূর্তি করে ছেড়ে দিবে। অপূর্ব চৌধুরী বুঝলেন ফারিয়ার সাথে ফাহাদের ব্রেকআপ হয়েছে। হঠাৎ করে পেছন থেকে মজনু মিয়া ফাহাদকে জিজ্ঞাসা করলেন। মাইয়ার নামডা কি কইলি? ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে বলল ফারিয়া জাহান। মজনু মিয়া অপূর্ব চৌধুরীর কাছে এসে বললেন স্যার নামডা খুব পরিচিত মনে হইতাছে। রফিক হায়দারও বলে উঠল স্যার খুনির হবু কনের নামও ফারিয়া জাহান। অপূর্ব চৌধুরী এবার কৌতূহলী হয়ে রফিক হায়দারকে বলল ক্যাস ফাইলটা নিয়ে এসো। ফাহাদকেও জিজ্ঞেস করা হলো ফারিয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য। ফাহাদ শুধু ফোন নাম্বারটা ছাড়া ফারিয়ার সম্পর্কে আর কিছুই জানে না। অপূর্ব চৌধুরী এবার কষে এক চড় বসিয়ে দিল ফাহাদের গালে। শালা বদমাইশ! মাইয়ার লগে প্রেম করছস কিন্তু, তার সম্পর্কে কিছু জানিস না! ফাহাদের মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। মিথ্যে একটা ক্যাসে আটকে গিয়ে মার খাচ্ছে। সামনে আরো কত কি দেখতে হবে কে জানে! ফাইল ঘাটাঘাটি করে দেখা গেলো সবি ঠিক আছে। ফাহাদের যে মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল সেই মেয়ের হবু বরই খুন হয়েছে। এটা শোনে ফাহাদ প্রচণ্ড রকমের ঘাবড়ে গেলো। অপূর্ব চৌধুরী যাওয়ার সময় রফিক হায়দার আর মজনু মিয়াকে ভালো করে বলে দিলেন যেনো ফাহাদকে ভালোমতো জিজ্ঞেস করা হয় প্রয়োজন হলে লাঠির আঘাতও করতে বলা হয়েছে যেভাবেই হোক স্বীকারোক্তি আদায় করতে হবে। ফারিয়াকে কল করা হয়েছে। আগামীকাল সকালে এসে উপস্থিত হবে থানায়। পরদিন সকালে ফারিয়া আসল জেলের ভেতর নিয়ে যাওয়া হলো ফারিয়াকে। ফাহাদ দেখেই উৎকণ্ঠিত কণ্ঠে বলল। আরে ফাহাদ তুমি এখানে? (চলবে)
বীভৎস রাত পর্ব-৩ ।। আতিক ফারুক

Spread the love
Facebook Comments