শুক্রবার, মার্চ ৩১, ২০২৩
Home > ছড়া/কবিতা > ‘প্রেম শাজরা’ সিরিজ ১-১০ টি কবিতা ।। জোহান কুতুবী

‘প্রেম শাজরা’ সিরিজ ১-১০ টি কবিতা ।। জোহান কুতুবী

Spread the love

সাদিয়া- ১
এভাবে উল্টায়ে জীন্দেগি চলে না গো মনা
দগ্ধমরুরতল, ক্রমাগত বিহ্বল- প্রেম।
রাতের প্রতিফোটা হরফের ব্যাখা দিচ্ছে হৃদয়।

নিজেরে তো ভাবছিলা ঈগলপাখি।
এখন কীরূপে মোমবাতি জালাও?
কোনদিকে ঘুরোফিরো?— কোনপাশে শোও?
(ইদানিং জানতে ইচ্ছা করে।)
মাঝেসাঝে ভাবি, বেণীকুঞ্জে হারায়েছ বুঝি!

সাদিয়া!
কতটা বিরহ বহন করে একটা পুরুষ, জানো?

পাখির চোখের ভেতর সমূহ সমুদ্র
এঁকে দিয়ে গেছ। অদৃশ্যের ভেতর
বিমূর্ত ছবি। জলপাই রঙ।
আমি আছিলাম চোখের ভেতর।
তুমি দেখো নাই? রোশনায়ন,
জ্বলজ্বল ফোটা তারার মতন।
অগ্নুত্পাত টুটেছে মেঘের মালা।
আমি আছিলাম চোখের ভেতর।
তুমি দেখো নাই?- অখন্ড একা।

সাদিয়া!
তখনো এখনো, স্রেফ উষ্মার ফিকে রঙ।
আয়তনয়নে, মুছেনি ত নিদ্রাসক্ত কাল?
কত মুখ এল গেল, কত মুখ পেরুল হায়।
কত কত অঘটন, জাহাজ পাটাতন জুড়ে।
একা বসে আছি রাতের খদ্দের হব ভেবে।

—এভাবে একদিন তোমারো খ’শে গেলে ডানা;
সূদুরপ্রসারে চোখ রেখে বসে যেও— দিগন্তে!

জিয়ানা- ২
এখনো পাইনি নির্ভর, কোনো কন্ঠস্বর,
দুরাভাষ যন্ত্রে।
—ছেড়ে যাওয়া ইথার।

তুমি আমার প্রথম রাতের মুক—
দরূদের সুর।
হেলেদুলে আবৃত্তি, চুপচাপ
আর্তচিত্কারে ভাঙে চাঁদের কন্ঠ।

জিয়ানা,
সুদূর প্যারিস— ভায়োলিন ভাঙে নৈঃশব্দ প্রপাত,
গলায় আকিক পাথরে তজাল্লীত আয়না’র সুর।
খন্ডখন্ড নুর। তুরপবর্ত ভাঙে। তা থৈথৈ হুর।
—বহুদূর বহুদূর
আমি ভাঙি মৌন বাতাস— অভিমানে।

কাঁচভেদে তোমার সুর,— রিনরিন।
পলকা টোকায় ভাঙে তীব্র নালী।
দমক, রিরিরি শব্দে শফেদ কাশ্মির।
কাশ্মির, শাদাকাশফুলে পহেলা শরত্।

এখনো দুরাভাষ যন্ত্রে তাকাই— কেউ
কাষ্ঠে ঠোঁট আর স্বর ঘষে বলে উঠে,
জোহান!’
এঁকে নিলাম, স্বচ্ছ গ্লাসে পানি মিশ্র
নারীসুর।

জিয়ানা,
আমি ভাঙি মৌনবাতাস
—হালকা অভিমানী সুর
বহুদুর বহুদুর।

রিমি- ৩
রিমি! ক্যামন আছো হে, তুমি?

বহুদিন পর
দেখো! উঠানে রোদ উঠে পড়ে আছে।
রিমি, তোমার সে নীল ফ্রকটা আছে?
খুব নীলাভ যেটা, মক্কাবৃত কালো চাদর।
নীল নীল শাড়িশায়ায় সমূহ উঠান জুড়ে।
নীল রঙ ভাসেনা, ইদানিং আত্মার চিত্রে।

রিমি!
আসো  দেখে যাও, আজকাল
সমস্ত রশি দখলে নিয়েছি, আমি।
আসো! ঠেলে দিবানা?
কুড়ায়ে দিবা পাঞ্জাবী-পাজামা,
প্যান্ট-শার্ট।

বৃষ্টি, ফোঁটা হয়ে পড়লেই উঠান জুড়ে।
ব্যালকনির নাবিক ঘোড়া হয়ে দৌড়ে।
তবু দাড়িয়ে ধীর, দেয়ালে কান খাঁড়া
ওপাশে চুড়ির রিংরিংরিং শব্দের ছেদ।
অসহায় দেয়ালে চুমু খেয়ে সরে আসি।
দেখি, নৈঃশব্দের লাল বিড়ালটা উঠানে
এল কিনা! তার তুলতুলে পায়ে কত চুমু
খেয়েছি রিমি তুমি জানো?

রিমি!
এখন আর উঠানে দাড়াই না, বিশ্বাস কর?
ফিরি না, দীর্ঘশ্বাস কোনো নারীর দিকে।
দেখিনা, কত কত বুক ফোলা নারী এসে
দাড়িয়েছে খোলা আকাশের নিছে।
ফড়িঙের মত মুখ করা নারীদল
ছাদে কিংবা উঠানে হাঁটে।

(আহা! হাসি ছলছল। ছলকে কান্না
—যেন বিদঘুটে শহুরে বিকেল।)

একা ছাদ- ব্যালকনি আর অলস উঠান জুড়ে,
দেখি মেঘের ঘষাঘষি। পাখিদের মেরিন সংঘর্ষ
—ভাঙা প্রকৃতির কান্নাময় চোখ।

চোখ কোটর ফেলে চলে যাচ্ছে বিকৃত শিস।
কেটে যাচ্ছে শিস, ঢাকার যত দর্প দালান মূলে।

আমি দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট— রিমি!

রাধিকা- ৪
হাঁটছি মরুভুমে টকটকে অগ্নি,
স্প্যানিশ গিটারে বাজে চৈত্রঘূর্ণি।
স্নাতে টুপ্ করে পড়া ফার্মেলিনগন্ধ।
ভেনেসিয়ান কমলারঙের মূর্তি হে!
আইভিলতা ফাঁক, বেআব্রু ইতিহাস
অগ্নিশেষ আঁধিমা কাঁপছে তিরিরি
সান্দ্রবুক শুষে নিছে অতটুকু ঘাম।
নিলাজ কুপির ব্রা-কাট আবেদনী;
নৃত্যরত জলপরী ফিঙেল সার্চলাইট
কেঁপে উঠা ঘাসের জাজিমে সারস;
মুখ তুলে তোর দিকে চেয়ে থাকে।

শোন্, হে বাদামী নারী!
রাজনীতির বোরাকে চড়ে আসছি।
সমস্ত পবিত্র গীতা মুখস্ত করে নিয়ে
একদা তোর সামনে এসে দাড়াবই।
সত্যি বলছি মাইরি! খোদার কসম!

আঈনুন রাফিয়া- ৫
বহুদিন অর্চনা পাঠ করিনি, আসো আঈনুন!

মনে পড়ে ঈর্ষাতুর মাহুতের কথা খুব।
দায়সারা নাবিক দেখেনি তোমার চোখ।
তোমাকে দেখার আয়না বারবার দূরে,
মনে করিয়ে দ্যায় এক সন্ন্যাসিনীর কথা।
আঈনু, ঈশ্বর কি আজো প্রেমপত্র দ্যায়?
সভ্যতার পুরানো প্রেম রচা হলে ফিরি,
অধমের মত। স্থানের পালা বদল করি।
হবে? আবারো কখনো অর্চনা পাঠ!
প্রতিটি পুরুষেই কিন্তু মায়ের স্তন চাখে,—
কীভাবে তোমার মেলা স্তনাগ্রে হাত দিই?
বল, আঈনুন!
উত্তর নেই, না?
আসো মৃগনয়না, আবার অর্চনা পড়ি।
হয় উত্তর মিলে যাবে ভেবে ভেবে
ফরসেপস্ নখর আঁকবে, একদা হিংসে
কোলাজ। আমাদের সংবাহিত হৃদয়ে,
বাজবেনা অর রোম্যান্টিক মন্দ্রি স্পন্দ।

আঈনু, তাকিওনা! ডাকিওনা
আর! এরূপ
ফিরবনা কোনোকালে, কোনোভাবে।

আঈনুন,
তোমার সভ্যতার গলিযাপন করা,
এক মুসাফির আমি।
ক্যানো এইভাবে ডাকো?
ডেকোনা আর!— ফিরবনা।
স্খলিত বসন ফেলে বরং
বাঁকাচোখে তাকাও- ‘হৃত্পিন্ডে’!
(এরচেয়ে বড় দ্বিতীয় প্রেমিক নেই
—আমাদের তল্লাটে।)

কাটগ্লাস বেজে ঠুংরি জহুরি চোখ
আর হাঁটবে অন্ধ একমাহুতের মত
দিনমান শুয়ে যাবে সুর্যের দিক—
আমরাও ভুলে যাব যত ইতিকথা।

আঈনুন রাফিয়া!
এই শীতে তোমায় মনে পড়ছে খুব
তোমার দেয়া চাদর মুড়িয়ে, গুঁজে
বসি ডিভানে। ভাবতেই মনে পড়ে
এই বুঝি মিশরীয় সভ্যতা কাঁদছে।

আরুশি- ৬
মাদী পোয়াতি ঘোড়ার হ্রেষা শুনেছ?
যে স্বর যৌন কাতরতা সৃষ্টি করে।
পূর্বজন্মে তোমার স্তনে মাথা রেখে,
এই ধ্বনিকে সঙ্গমের প্রতীক বলি।
তোমার মনে আছে? আরুশি!
কালো প্রসাদে ফিনিক মারে রক্ত
আরু! ব্ল্যাক ডায়মন্ড তো দেখেনি
কখনো। তোমাকে দেখেছি। তুমি
আমার ডায়মন্ড। প্রেমিক আমি
তোমার। আসো, কোল পাতো তো!
শুয়ে পড়ি, তোমার কোলজুড়ে
ঘুমিয়ে, প্রেমযাপন করব আমি।

দহন-দাহন তোমার-আমার চোখ
ব্যথাতুর চাঁদ, পূর্ণসবুজ মদ নিয়ে।
উড়ছে-ঘুরছে চক্রনাভীর গর্তে’র
ম্যানহোল জুড়ে, দুর্বাগতি খুব খুব।
তোমার কোলে মাথা রেখেই ভেসে
পেরিয়ে যাচ্ছি, আলোক সমুদ্রবন।
পেরিয়ে যাচ্ছি ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি
ঘুর্ণিমাস্তানের ত্রাস, ফিঙের মতন।

বাহ্ চলো, চলো হে আরুশি!
ঘুরোফিরো এইরূপ ফিঙ দিয়ে,
পলকা টাইফুনের ছেদন করা
রানারে’র পায়ের তলার তৃণ।

বাহ্ চলো, চলো হে আরুশি!
তোমার কোলেই হোক—
—সভ্যতার প্রেমযাপন!

আয়না- ৭
ফের তোমার মুখ ভাসে, ডানার রঙে।
মুড়িয়ে বসে নীল চাঁদ পাখির স্বর।
বাকিদের কোলাহল ডানা, বেশক আনাগোনা।
পরিযায়ী স্বর তুলি নাই আমি ও আমরা।
ক্ষুধার্ত চাহনি ভেদ করবে ভেবে- পাতা।
নিদ্রিত শামুকের খোলসে, মুখ দেখা যায়।
স্পষ্টতর সফেন; এখনো হরদম আনাগোনা।
হলক ছুটেনি স্বরগ্রামে— টুটেনি হালত,
জিকিরের;— সবুজ ঘাসের জাজিমে হাঁটি।
তবু আয়নায় ফিরি ভাঙা পাঁজর নিয়ে।
আয়না! দিল্ খুলে জিকির করো, রপ্ত।

নিঝুম গাছের পাখিরা ফিরতি পথে—
তোমার চোখে ডুবে, শৈশব দেখে যাবে।
প্রিয়া হে, শুধু আমায় রপ্ত করতে শিখো!

অতঃপর মুসাফির,
গভীর সন্ধ্যায় কখনো ঘর ফিরলে!

তখনো মহান রাত
কালো কবরের পাশেই পড়ে আছে নীল কবুতর।
আর কবর পাহারা দিতেছে তিনজন শ্বেতকাক।

তাজাল্লী- ৮
একেএকে অদৃশ্যের ভেতর,
বিমূর্ত ছবি অখন্ড একাকী
বৃক্ষের ছায়া।
রাতের নীলাভ হৃদয়;
উষ্মার ফিকে রঙে—
কোশিশ কর, হে ঘুমন্ত ছুরি!

উড়ন্ত লন্ঠনের নির্পতন সুর।
প্রতি বৃক্ষশালায় গেঁথেছি,
শাদা দ্যুতিমান লবণের দানা।
বাতেনী মকাম জুড়ে নিরেট
শুকনো পাথর। এতেই আঁকি;
ঈশ্বরের হৃদয়, সুর কিংবা স্বর।

আসো, আসো হে আরমাঁ!
আমি নিয়ত বাঁধি, তুমি ইক্বতেদা কর।
তুমি নিয়ত বাঁধো, আমি ইক্বতেদা করি।

আসো, আসো হে প্রিয়!
রক্তাক্ত অযু সেরে দুরাকাত;
প্রেমের নফল, আদায় করি।

নূরিতালোক- ৯
অভ্রগামী পালক মেঘেতে, লেগেছে কোলাহল।
ভৈরব কপালে চন্দন মাখে, টিপের আঁচল।

টিপেতে বসিয়া, করে যাই ধ্যান।
ধ্যানী হয়ে উঠি- মহীরুহ এক।

নড়িনা-চড়িনা— এসে গোলামের মেলা।
বটবৃক্ষে বসিয়া খোলে, নিলামের ডালা।

(—বিক্রিত হই আমি গোলামের মত।)

তীগ্মরশ্মি ভেদিয়া আয়না ভেঙ্গে, চলো!
নূসরাত খন্দকার তুমি, হে উড়ন্ত আলো।

—আকাশে আছি আমি টিপ হইয়া তার।
বিক্রিত তার লগে উড়ে; নিশি হব পার।

রক্তবাহী রাত— খন্দকার নূসরাত
বসেবসে ভাবে, কখন পুরাবে মেলা?
বটবৃক্ষ, ধ্যানে-জ্ঞানে তখনো একেলা।
আমি আছি নুসরাত, ভাবিও না আর।
গোলামের অশ্রু বেয়ে নদী হবা পার।
এখনো আধেক মেলা— জিকিরের তান।
তরতরাইয়া বেয়ে যাও, গাও মাঝি গান।
পলান্ন বায়ুতে কাঁদে, আত্মার সুর।
নূসরাত চলো, চলো! নূরিতালোক পুর।
বিস্ফুলিঙ্গ মর্মভেদে দুত্যি মিছিরির দানা।
জিকিরে রত গোলাম হায়, হইয়াছে ফানা!
ফানাফিল্লা— বাক্বাবিল্লা একসুরে টানো।
আমার প্রভু, হে প্রিয়তমা- চাবুক হানো!
হানিলে চাবুক প্রিয়া, টুঁটিবে সমূহ নেশা।
খোশামদেদ নূরিতালোক— মিটিবে তৃষ্ণা।

দীর্ঘ দই আর দুধের ধাতব পাথরে।
প্রিয়াহারা চিহ্ন ডুবায়ে কাঁদি— আহারে, আহারে!

প্রেমিকা- ১০
(প্রেমের আসহাবে কাহাফ আয়নার
চোখে দেখি, মাজরাহুত ঘোড়া —
ছায়াছবি পড়ে আসে সুবহেসলত্।)

রমণী! তোমরা চুল মেলে দিলে—
আমি ভাব করি। প্রেমের বেড়রুমে
না ঢুকেই, ফিরি একা—পরগাছা।
যৌবন কুত্তার কামড়ে আমি ফিরি।
নারীত্বের প্রেম আপেলের ভেতর-
ভাবতেই, বহুদূর এক রঙিনঘোড়া
উড়ে যায়।

ত্রিভুবনকে মার্বেলের ন্যায় টোকা
মারা সৈন্য— প্রেমিকা’র চোখে
ফুল নিয়ে দাড়ান, পদনত আমি-
রক্তাক্ত বৃদ্ধাআঙুলি কিনি, নিজস্ব
ঘাড়ে; আরো কিনি পশমিনা চাঁদ।
অদূরে, ফাটছে বরফ— বিউগল
কপিকল— মিউজিয়াম পাজর।
আমার এই দেহ; একটা দোকান
বিকি-কিনি করি হৃদয়, হে প্রিয়া!

[রঙিন সাইরেন বায়ুতে ছুটছে আসমান,
ছুটছে দিগ্বলয়। তীব্রগামী বুলেট ফোঁড়ে
দ্যায়, আসমানী মৃণাল। হুইসেল বেয়ে
উঠছে মহাকাশ— মিনার সুর, ধীর]

মহামান্য সুর প্রাচীর হে—
কৌশলে মহাকাশ ভেদে উঠছ!
এসব ভাঙ্গা টানেল পেরিয়ে
হলেও একদা ফিরব রে প্রিয়া!

তখনো গভীর রাত
একজন শাদা প্রেমিকা বসে আছে দিগন্তে।
তার কোলে মরে পড়ে আছে একটি কাক।

Facebook Comments