Spread the love
প্রাণীদের প্রতি ভালবাসার অটুট মহিমা। শুধু মানুষেরাই পোষা প্রাণীকে ভালবাসে এমনটা নয় পোষা প্রাণী গুলোও মানুষকে ভালবাসে। নিঃস্ব এবং নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়। ভালবাসা এটা বিশ্বাস। অার বিশ্বাসটা শক্তি। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল তার সেবাকর্মের মাধ্যমেই সৃষ্টি করেছিলেন অমরত্বের পথ। তিনি বিশ্বের মানুষের হৃদয় জয় করেছেন একমাত্র তার সেবার মহিমা দ্বারা। নাইটিঙ্গেলের অত্যন্ত প্রিয় প্রাণী ছিল বেড়াল। আত্মমহিমায় উদ্ভাসিত নাইটিঙ্গেলের সংসার ছিল ১৭টি বিড়ালকে নিয়ে। ক্রিমেনের যুদ্ধ থেকে ফেরার পরপরই তিনি শুরু করেন বিড়াল নিয়ে তার গোছানো সংসার। শুধুমাত্র তাদের লালন-পালনই মুখ্য ছিল না, বিড়ালগুলোকে নিয়েই হাসি আর খেলায় কেটে যেত তার সময়। ঐ বিড়ালগুলোর মাঝে তার সবচেয়ে পছন্দের বিড়াল ছিল ‘মি. বিসমার্ক’। বিসমার্ককে তিনি বলতেন ‘সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিড়াল’। নাইটিঙ্গেল বিসমার্ককে এতোটাই পছন্দ করতেন যে, তার সব চিঠিপত্র এবং কাজকর্মের মাঝেই থাকতো তার থাবার চিহ্ন! জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার পাশে ছিল একমাত্র সেই ১৭টি বিড়াল। তিনি তখন দারুণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। নাইটিঙ্গেলের শেষ শয্যায় বিড়ালগুলো সর্বক্ষণ বসে থাকতো তার সঙ্গী হয়ে। তাদের মায়া-মমতার ছোঁয়া, সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিমা, সহানুভূতি নাইটিঙ্গেলকে অন্যরকম এক তৃপ্তি দিয়েছিল। তাদের এই মমত্ববোধ ও সহানুভূতির ছোঁয়া যে মানুষের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়, তা নাইটিঙ্গেল মৃত্যুর আগেই সকলকে জানিয়ে গেছেন। নাইটিঙ্গেলের মৃত্যু হয় ১৯১০ সালে। মৃত্যুর আগেই তিনি তার অতি প্রিয় বিড়ালগুলোর জন্যে সব ব্যবস্থা করে গেছেন। তাদের দেখাশোনা এবং যাবতীয় দায়-দায়িত্বের বিষয়ে তিনি উইল করে গেছেন। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, তার বিশাল সম্পত্তির একটি বড় অংশ তিনি লিখে দিয়েছেন তার প্রিয় সঙ্গী সেই ১৭টি বেড়ালের নামেই! তিনি এবং তার বিড়ালছানা গুলো সত্যিই প্রমাণ করে গেছেন প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসার অটুট মহিমা। উইনস্টন চার্চিল বিশ্বাস করতেন প্রিয়প্রাণী বিড়াল তার সকল কাজের শুভলক্ষণ এবং সাফল্যের ক্রমোন্নতি। উইনস্টন চার্চিল ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নেতা। তারও ছিল দারুণ বিড়ালপ্রীতি। তার বিড়ালপ্রীতির পেছনে ছিল একটি বিশেষ ঘটনা, যা চার্চিলকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিল। তখন চার্চিল ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। তার অফিসিয়াল বাসভবন ছিল ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট। তিনি তার বাসভবনের অফিসে বসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার খসড়া তৈরি করছিলেন। মার্গেট শহরে সেই দিনের পরের দিনই ছিল তার রাজনৈতিক সমাবেশ। সবেমাত্র তিনি তার লেখাটি শেষ করে ফেলেছেন, ঠিক অমন মুহূর্তে তার নজরে পড়লো, তার ঘরেই দরজা ঠেলে একটি কালো বিড়াল ঢুকছে। একে তো চার্চিলের বিড়ালপ্রীতি ছিল অভাবনীয়। তার উপর বিড়ালটির এই আকস্মিক অনুপ্রবেশের ঘটনা তার কাছে মনে হতে লাগলো কোনো শুভ ঘটনার সংকেত। সেই ভেবে তিনি তখন থেকেই বাচ্চা বিড়ালটিকে ঘরেই রেখে দিয়েছিলেন। আদর করে নাম রাখলেন ‘মার্গেট’। অবাক করা হলেও সত্য যে, পরের দিনের চার্চিলের বক্তৃতা কেবল সফল বক্তৃতাই হয়নি, বরঞ্চ রাজনৈতিক দিক থেকে চার্চিলকে করে তুললো তুমুল জনপ্রিয়। তারপরের ঘটনা আরো চমৎকার। সেই বিড়ালছানাটির যেন কপাল ফিরলো। সোজা চার্চিলের বেডরুম হয়ে গেলো তার পাকাপাকি স্থান। পরের দিন থেকেই চার্চিল বিড়ালছানাটিকে নিয়েই ঘুমাতেন। বিখ্যাত হওয়ার নেশায় যেন তিনি এটিকে কাছছাড়া করতেই চাইতেন না। অথচ মার্গেটের আগেও তার একটি বিড়াল ছিল। এর নাম ছিল ‘নেলসন’। মার্গেটের মতন নেলসনও কিন্তু চার্চিলের খুব প্রিয় ছিল। চার্চিল নেলসনকে তার সব গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়েও নিয়ে যেতেন এবং উদ্দেশ্য সফল হতেন। চার্চিলের জীবনের শেষ মুহূর্তেও তার সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল আরো একটি বিড়ালছানা। নাম তার জক। চার্চিল জককে পরিচয় দিতেন তার ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে। চার্চিল এতোটাই বিড়ালপ্রেমী ছিলেন যে, তিনি তার প্রতিটি ক্যাবিনেট মিটিংয়ে জককে শুধু পাশেই রাখতেন না, খাবার টেবিলেও জককে ছাড়া তিনি খেতে বসতেন না। আর জকও হয়ে উঠেছিল প্রভুভক্ত। চার্চিলের মৃত্যুর সময়টিতেও জককে বিষণ্ণ অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। মৃতদেহের পাশে সারাক্ষণ বসে ছিল সে। চার্চিলের প্রিয়প্রাণী জকও প্রমাণ করল প্রিয়প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা বিফল হয়নি।
বৃদ্ধ বয়সের সঙ্গী প্রিয়প্রাণী চার্লস ডিকেন্স ও তার স্ত্রী একদিন দেখলেন তাদের বাসার দরজার বাইরে একটি বিড়ালছানা মিউ মিউ করে ডাকছে। তারা সেই বিড়ালটিকে কোলে তুলে নিয়ে লালন-পালন করা শুরু করলেন। অল্প কিছুদিনের মাঝেই বিড়ালটি তাদের এতটাই প্রিয় এবং আদরের হয়ে উঠে যে, সেটি ছাড়া তাদের যেন কিছুই চলতো না। ডিকেন্স আদর করে বিড়ালটির নাম রাখলেন ‘উইলিয়াম’। আরো কিছুদিন পর উইলিয়াম জন্ম দেয় একটি সুন্দর ফুটফুটে ছানা। তখন ডিকেন্স উইলিয়ামের নাম পাল্টে নতুন নাম রাখেন ‘উইলহেলমিনা’। মা বিড়াল এবং প্রিয় ছানাটি ছিল ডিকেন্সের অতি প্রিয় সঙ্গী। ডিকেন্সের কাছে ছানাটি এসে খেলার আবদার জানাতো তার লেখার টেবিলে দাগ কেটে। মা বিড়াল আর ছানার আবদার যেন লেগেই থাকতো সর্বক্ষণ। ডিকেন্স কিন্তু কখনো এসবের জন্যে বিরক্ত হতেন না, বরঞ্চ তার বেশ ভালোই লাগতো আবদারের মাঝে ডুবে থাকতে। তার বিড়ালটিকে নিয়ে একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল এমন- “বিড়ালকে আদর ও ভালোবাসার থেকে অন্য কিছু কি বড় উপহার হতে পারে?” প্রখ্যাত লেখক এডগার এলান পোর প্রিয় বেড়ালটির নাম হচ্ছে ‘ক্যাটরিনা’। পোর স্ত্রী একসময় দারুণ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তার ঘরটিতে যাতে রুম হিটার দিয়ে গরম রাখা হয়। কিন্তু তখন পোর আর্থিক অবস্থা এতোটা ভালো ছিল না যে, রুম হিটারের ব্যবস্থা করবেন। তাই তিনি তার স্ত্রীর ঘরটিতে রুম হিটার লাগাতে পারেননি। কিন্তু অদ্ভুত বুদ্ধি এল তার মাথায়। তার প্রিয় বিড়ালটিকে স্ত্রীর শয্যার পাশে সবসময় বসিয়ে রাখতেন, যাতে বিছানাটি অন্তত উষ্ণ থাকে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ‘ক্যাটরিনা’ও বিশ্বস্ত সঙ্গীর মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁয় বসেই থাকতো। এই আবেগময়, আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসার দৃশ্য দেখাল প্রিয়প্রাণী ‘ক্যাটরিনা’। পো তার বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় গল্প ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’ লিখলেন ক্যাটরিনাকে নিয়ে। বিশ্বাস ও ভালবাসা সাফল্যের মূলমন্ত্র এই কথাটি প্রমাণ করেন পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত ব্যাক্তিরা এবং তাদের প্রীতিকর ভালবাসার প্রিয়প্রাণী গুলো।
Facebook Comments