লিয়াকত আলী মাসঊদ
আলেম, লেখক ও প্রাবন্ধিক
সুপ্রিয় নবীন হাফেজে কুরআন ভাই ও সাথী! আমার উস্তাযে মুহতারাম আল্লামা হাফেজ জালালুদ্দীন দা. বা.-এর কিছু অতিমূল্যবান উপদেশ তোমাদের সামনে তুলে ধরছি— যা তিনি তাঁর তালাবাদের প্রতি স্নেহ ও দরদমাখা কণ্ঠে বলতেন।
আল্লামা হাফেজ জালালুদ্দীন দা. বা. ছিলেন “সূর্যকান্দী হাফিজিয়া সিরাজুল উলূম মাদরাসা” পরিচালক । তিনি বি-বাড়িয়ার রঈসুল মুফাসসিরীন বড় হুজুর আল্লামা সিরাজুল ইসলাম রহ.-এর প্রায় এক যুগের খাদেম ছিলেন ৷ বড় হুজুর রহ. ছিলেন আমার হুজুরের মুরশীদ ও পৃষ্টপোষক ৷ তাই, তার নামেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “সিরাজুল উলূম”৷
আল্লাম হাফেজ জালালুদ্দীন বলতেন-আযীয তালাবা ! তুমি যদি সত্যিকার অর্থে কুরআন পাকের হামেল, ধারক-বাহক হতে চাও, তাহলে তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হবে ৷ তোমাকে হাঁটা-চলা কামে-কাজে তোমাকে তিলাওয়াতে অভ্যস্ত হবে হবে ৷ কারণ, নামাযে এবং পায়চারী ও তাফরীহতে তিলাওয়াত করলে ইয়াদ খুব মজবুত হয় ৷পরিশেষে বলতেন, বিশেষ করে রমজান মাসে তোমার একটা রুটিন থাকা চায় ৷ হযরতের নির্দেশনা মূলক রুটিন ছিল এই-
১. তুমি তারাবীতে যে পারাটা পড়বে, সেটা তুমি আগের রাতেই তাহাজ্জুদে পড়ে নিবে ৷
২. সকাল ৯/১০টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে ওজু-গোসল করে প্রথমে তুমি তাহাজ্জুদে যে পারাটা পড়বে সে পারাটা ইয়াদ করবে, পরে আজকের তারাবীর পারাটা সহকর্মী হাফেজ সাহেবের সাথে দৌড় করবে ৷ বাদ-জহুর বা বাদ-আছর পারাটাকে মুসল্লীদেরকে শোনাবে ৷
৩. প্রত্যেহ তাহাজ্জুদ ও তারাবীতে পঠিতব্য পারা ছাড়া বাকী কুরআন থেকে নিয়মিত অন্তত পাঁচ পারা তিলাওয়াত করবে ৷
৪. বাদ মাগরিব পুনরায় তারাবীতে পঠিতব্য পারাটি ছয় রাকাত আওয়াবিন নামাজে পড়বে ৷
৫. সপ্তাহে একদিন সারা সপ্তাহে যা পড়েছ সবটা তারাবীর পর একটু বিশ্রাম করে নামাযে পড়ে নেবে ৷
এমন করে যদি তুমি ৫/১০ বছর মেহনত করতে পারো, তাহলে বাকী জীবন তোমাকে কুরআন পাক ইয়াদ রাখা নিয়ে কোনোরূপ দুশ্চিন্তা করতে হবে না ৷
আলহাদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহতা’য়ালার অসীম রহমতে আমি হিফজ শেষ করার পর মিশকাত পর্যন্ত প্রায় একাই খতমে তারাবী পড়াইছি এবং আমার উস্তাযে মুহতারাম কর্তৃক নির্দেশিত রুটিন মেনে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি ৷
যখন আমি ইসলাহুল মুসলিমীন বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর ছিলাম তখন দুই রমজানে আমার মুরশীদ আমার আঁকা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাস্ঊদ দা. বা. কিয়ামুল লাইলে তিলাওয়াত শোনানোর শরাফত লাভ হয়েছে ৷
হযরত আলী রাযি. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাক মুখস্থ রেখেছে এবং এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম জেনে মেনেছে। তাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশজন লোক সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম আবশ্যক ছিল। [তিরমিযী-২৯০৫, আহমাদ-১২৭১, মিশকাত-২১৪১]
পবিত্র কুরআনের হাফেজ সাহেব যাঁরা তাঁদের মান-মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিভাত হয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদ সা.-এর হাদীস থেকে। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি যে কুরআন মজিদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।”
[বুখারী ]
তিনি আরও ইরশাদ করেন, “সাহেবে কুরআন তথা যিনি কুরআন শিখল এবং তার ওপর আমল করল (কিয়ামতের দিন) তাঁকে বলা হবে পড় এবং মর্যাদার স্তরে উন্নীত হও, আর ধীরস্থিরভাবে পড় যেভাবে তুমি দুনিয়াতে পড়তে। কেননা তোমার মর্যাদার স্তর ওই আয়াতের সমাপ্তির ওপরই যে আয়াত পর্যন্ত তুমি পড়বে।” [আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ]
ইনশা আল্লাহ, আমরা যদি হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জেনে মেনে চলতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. কর্তৃক হাফেজে কুরআনের জন্য যে সব ওয়াদা রয়েছে সে সব ওয়াদ আমাদের নসীব হবে ৷