ফারিয়াকে দেখে ফাহাদও চমকে ওঠল। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে গেল। দু’জন দু’জনের দিকে বিস্ময় বিহ্বলে তাকিয়ে আছে। থতমত খেয়ে গেল। কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে দু’জন। ফাহাদ বসা থেকে দাঁড়াল। ফারিয়া দাঁড়িয়েছিল। অনেকদিন পর ফারিয়াকে দেখছে ফাহাদ। আগের চেয়ে অনেক রুপবতী হয়েছে। ফুলসুন্দর মুখাবয়বে মেকআপ মেরে আরো দ্বিগুন সুন্দরী হয়ে গেছে। কপালে লালটিপে তাকে বেশ মানিয়েছে আজ। ফাহাদের সাথে যখনি দেখা করার কথা হতো তখনি ফাহাদ বলত, তুমি লাল শাড়ী আর কপালে লালটিপ পরে আসবে। তোমাকে তাতে খুব সুন্দর দেখায়। ফারিয়াও নিজ প্রিয়তমকে মুগ্ধ করার জন্য তার কথামতো সেজেগুজে আসতো। তারা সবসময় শাহজাহানপুরের উত্তরপাড়ায় বিশাল শিমুল গাছের নিচে বসেই গল্পগুজবে মত্ত থাকতো। কত সুখ দুঃখের আলাপন হতো। কিন্তু, আজ!
ফারিয়ার ডাকে সম্বিত ফিরে পেল ফাহাদ। এই ফাহাদ! তুমিই শেষ পর্যন্ত রায়হানকে খুন করলে! ফাহাদের বুঝতে বাকী রইলনা যে,যেই লোকটি খুন হয়েছে তার নাম রায়হান। ফাহাদের ভ্রু কুঁচকে গেল। ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল। তুমি কি আমার থেকে এমনটিই প্রত্যাশা করতে? ফারিয়া শীতল চোখে তাকিয়ে বলল আমি কখনো তোমার থেকে এমনটি প্রত্যাশা করিনি। কিন্তু, খুনের সমস্ত প্রমাণ তোমার কাছে বিদ্যমান। পুলিশের লোকেরাও তোমাকে সেই ঘটনাস্থল থেকে ধরেছে। আর আমার উপর প্রতিশোধ নিয়েছো রায়হানকে মেরে! এসব শুনে ফাহাদের মেজাজ ঘাবড়ে গেল। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে ওর। মন চাচ্ছে অপরাধী না হয়ে যেহেতু এতো অপরাধের আঙ্গুল তার দিকে। তাহলে, ফারিয়াকেই খুন করে ফেলে। কিন্তু, মনের বিরুদ্ধেও কখনো কখনো কাজ করতে হয়, ফাহাদ এটা ভালোভাবেই জানে। তাই, আত্মনিয়ন্ত্রণ করে মুখ গম্ভীর করে জেলের কোণে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পরে। ফারিয়া কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে ফাহাদকে। ফাহাদ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। যে মানুষটিকে সে এতো ভালোবাসতো, সবার থেকে আলাদা মনে করতো, যেই প্রিয় মানুষটির উপর ফাহাদের আস্থা ছিল। সেও তাকে অবিশ্বাস করছে! ফাহাদও ঢুঁকরে কেঁদে ওঠলো।
হাবিলদার রুস্তম আলি এতক্ষণ তাদের সব কথা শুনছিল জেলের বাহির থেকে।
তারও যেন চোখের কোণ ভিজে উঠল। ক্ষমতা থাকলে হয়তো সেই এটার সঠিক তদন্তের জন্য যারপরনাই চেষ্টা করতো। কিন্তু, তার দায়িত্ব তো জেলের পাহারাদারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
ফারিয়া রুমাল দ্বারা চোখ মুছতে মুছতে জেল থেকে বেরিয়ে সোজা ইনস্পেকটর অপূর্ব চৌধূরির চেম্বারে ঢুকল।
অপূর্ব চৌধুরি এখনো আসেন নি। বিকেলে ৪ টায় আসবে। জরুরী একটা কাজে ঢাকার বাহিরে গিয়েছেন। ফারিয়া অপূর্ব চৌধুরিকে না পেয়ে রফিক হায়দারের কাছ থেকে নাম্বারটা নিলেন।
রাত ১১ টায় অপূর্ব চৌধুরির ফোনে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে কল আসলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে শোনা গেল। অপূর্ব চৌধুরি পরিচয় চাইলে মেয়েটি বলল স্যার আমি ফারিয়া। অপূর্ব চৌধুরি বললেন ও আচ্ছা! কেমন আছেন আপনি? ফারিয়া উৎকণ্ঠিত কণ্ঠে বলল স্যার নিজের হবু বরের খুন হওয়ার পরও কি কেউ ভালো থাকতে পারে! অপূর্ব চৌধুরি প্লিজ আপনি কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না। ঐ খুনি ফাহাদকে দু”একদিনের মধ্যেই রিমান্ডে আনা হবে তখন সব ঝরঝর করে বলে দিবে।
(চলবে)