রাত পোহালেই ক্রিসমাস ডে। ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন। দিনটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম। ধর্মীয় আর সামাজিক দিন। সারা বিশ্বে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে থাকেন। দিনটি উপলক্ষে নতুন সাজে মেতে উঠছে পুরো বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়।
দিনটি সামনে রেখে খ্রিষ্টানরা তাদের গির্জা, বাসা, বাগান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্রিসমাস ট্রি, মোমবাতি ও আলোকসজ্জাসহ নানা সরঞ্জামাদি দিয়ে সাজান। জীবন যেন আনন্দঘন ও আলোকিত হয়, তারই বাহ্যিক প্রকাশ যেন এটি। উপহার সামগ্রী নিয়ে সবাই নিজ পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবকে দেখতে যান।
দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশে চলছে নানা প্রস্ততি। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও চলছে ক্রিসমাস পালনের প্রস্ততি। উৎসবের আলোয় নিজেদের রাঙিয়ে তুলতে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।
বড় দিনের যে মূল আকর্ষণ ক্রিসমাস ট্রি তা বিভিন্ন উপহার সামগ্রী ও কার্ডের মাধ্যমে সাজানো হচ্ছে। সেইসাথে প্রতিটি ঘরই বর্ণিল আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে। সেইসাথে দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে নগরীর নামিদামী তারকা হোটেলগুলোতে নেয়া হয়েছে নানা ধরণের ব্যবস্থা। ক’দিন ধরেই নাচে-গানে চলছে গ্রাহকদের আকর্ষণ করার প্রস্ততি।
বিশ্বের সকল মানুষের শান্তি কামনায় ও দেশের সকল মানুষ যাতে সুখে, শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেই জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয় দিনটিতে। কোনো ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আমেরিকার সিংহভাগ অধিবাসী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। তাই সেদেশে দিনটি নিয়ে চলছে বিশাল আয়োজন। দেশটির বিভিন্ন দোকানপাটে দিনটি উপলক্ষে চলে বিশাল মূল্য ছাড়। তাই এসময় আমেরিকায় কেনাকাটার হিরিক পরে যায়।
ক্রিসমাস ডে’তে নাইজেরিয়ায় শহরে যারা থাকেন তারা শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যান। ফলে ক্রিসমাসের সময় নাইজেরিয়ান শহরগুলি একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। তখন যত ভিড় সবই গ্রামাঞ্চল আর শহরতলির বাজারগুলিতে থাকে। বড়দিনে নায়জিরিয়ায় কেক নিয়ে তেমন কোনও উদ্দিপনা চোখে পড়ে না। দেশটিতে কেক তৈরির চেয়ে নানা পদে মাংসের সুস্বাদু রান্না হয় অনেক বেশি।
অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিসমাস যখন আসে তখন গ্রিস্মকাল থাকে। অস্ট্রেলিয়া ইউরোপ আমেরিকানদের মতো করেই বড়দিনের উৎসব উদযাপন করে থাকে। দেশটিতে আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম থাকলেও তারা বড়দিনের উৎসবে অংশগ্রহণ করে। অস্ট্রেলিয়ায় বড়দিন উপলক্ষে দু’টি বড় খেলা অনুষ্ঠিত হয়, এটা ওদের ঐতিহ্য হয়ে দাড়িয়েছে, বক্সিং ডে টেস্ট আর ইয়ট রেস, সিডনি থেকে হোবারট পর্যন্ত হয় ওই প্রতিযোগিতা। ক্রিসমাসের আগমণী বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শহরে আয়জিত হয় এক বিশাল শোভাযাত্রা, তাতে জমায়েত হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের। অন্যদিকে মেলবোর্ন শহরে অনুষ্ঠিত হয় ক্যারোলস বাই ক্যান্ডেল লাইটস নামে এক মিউজিক্যাল শো।
ইতালিতে বড়দিনের ছোয়া লাগে ৮ ডিসেম্বর থেকেই। অনেক আগে থেকে সবাই ক্রিসমাস ট্রি তৈরিতে ব্যাস্ত থাকে। পাশাপাশি যীশুর জন্মের সময়কার ছবি ফুটিয়ে তুলতে মা মেরি, জোসেফ, একটি গাধা, একটি হাঁস, শিশু যীশুও তৈরি করা হয় সেখানে। ইতালিতে প্রায় এক মাস ধরে দিনটির আঁচ লেগে থাকে। উৎসব শেষ হয় ৬ জানুয়ারি। সেদিন সবাই ক্রিসমাস ট্রি তুলে ফেলে।
ব্রাজিলে ক্রিসমাসের সময় থাকে গ্রীষ্মকাল। কিন্তু বড়দিন বলে কথা। সব জায়গাতেই ইউরোপ আমেরিকার মতো সাজসাজ রব পড়ে যায়। বিশেষ করে সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরোর মতো বড় শহরগুলিতে সাজের বাহার দেখার মতোই। ঠাণ্ডা কিংবা বরফ নেই বলে এখানে ক্রিসমাস ট্রি গুলিতে তুলো ছড়িয়ে রাখা হয়। সবথেকে মজা হয় কিউরিতিবা শহরে। এখানে ঘর-বাড়ি সাজানো ঘিরে রিতিমতো প্রতিযোগিতা হয়। কার বাড়ি কত সুন্দর হল সেটা ঠিক করার জন্য বিচারকমন্ডলী ঘুরে ঘুরে দেখেন।
মেক্সিকোতে বড়দিন উৎসব অন্য যে কোনও জায়গার থেকে আলাদা। শূধু তাই নয় ক্রিসমাস পালনের যে ধরনধারণ তা সংখ্যার দিক দিয়েও অনেক বেশি, প্রায় তিরিশ রকম। ক্রিসমাস এগিয়ে আসা মাত্র মেক্সিকানরা দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন, এটা চলে প্রায় ন’দিন ধরে, ঘটনা হল যীশু জন্মানোর পর মা মেরি একটু আশ্রয়ের জন্য দিনের পর দিন লোকের দরজায় দরজায় ঘুরে বেরিয়েছিলেন, সেই করুন ঘটনা স্মরণ করেই এই রীতি পালন। মেক্সিকোতে বড়দিনের উৎসব চলে অনেকদিন ধরে। ১২ ডিসেম্বর লা গুয়াদালুপানা নামের ভোজ দিয়ে শুরু হয় আর ৬ জানুয়ারি এপিফোনি ভোজ দিয়ে হয় শেষ।
সুত্র: বিডিমর্নিং