ও হেনরীর গল্প : ভালোবাসার জন্য
চিত্রশিল্পে এক চনমনে প্রতিভা নিয়ে মিডল-ওয়েষ্টের এক জীর্ণ ফ্ল্যাটে জন্ম নিয়েছিলো জো লারাবি। ছ বছর বয়সে সে একটা ছবি এঁকেছিলো—শহরের জলের পাম্পটার পাশ দিয়ে একজন বিশিষ্ট নাগরিক বাস্তসমস্ত ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছেন। শসা খেতের পাশে ওষুধের দোকানটার জানলায় এলোমেলো ভাবে টাঙানো ছবির সারির মধ্যে তার ওই প্রচেষ্টাটিকে ফ্রেমে বাঁধিয়ে ঝুলিযে রাখা হয়েছিলো। বিশ বছর বয়সে গলায টাই উডিয়ে আর একান্ত সঙ্গোপনে কিছু টাকা নিয়ে নিউ ইয়র্কের পথে রওনা হযেছিলো সে ।
ওদিকে দক্ষিণের এক পাইন-ঘেরা গ্রামে ডেলিয়া ক্যারাথার্স তিন সপ্তকে এমন প্রতিশ্রুতিময় গান গাইতো যে আত্মীয়স্বজনরা ওর তালপাতার টুপির তলায় শুধু মন্ত্র গুজতো, যাতে ও উত্তরের শহরে গিয়ে গান শেখা শেষ করে। শেষটা তারা দেখেনি, তবে এই কাহিনীতে সেটা আছে।
জো আর ডেলিয়ার দেখা হলো এক শিল্পশালায়। শিল্প আর সঙ্গীতের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী সেখানে ছবির আলো-আঁধারি, হ্বাগনার, সঙ্গীত, রেমব্রান্টের ছবি, ওয়ালফেল, প্রাচীরপত্র, শপাঁ এবং উলাও সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করার জন্যে সমবেত হয়েছিলো ।
– জো এবং ডেলিয়া একে অন্যকে কিংবা দুজন দুজনকে দেখে মুগ্ধ হলো । এবং সামান্য কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কারণ ( ওপরে দ্রষ্টব্য), শিল্পকে ভালোবাসলে তার জন্যে কোনো কাজই তেমন কঠিন বলে মনে হয় না।
নামজাদা লোক ম্যাজিস্টারের কাছে আঁকতে শেখে জো। নিজের বৈশিষ্ট্যের জন্যেই ম্যাজিস্টারের অতো খ্যাতি। ওঁর দক্ষিণা বেশি, কিন্তু উনি শেখান কম। ডেলিয়া সঙ্গীতের পাঠ নেয় রোজেনস্টকের কাছে—পিয়ানোর চাবিতে এলোমেলো ঝড় তোলার জন্যে র্তারও খ্যাতি অনেক ।
টাকাকডি যতোদিন অব্দি ছিলো ততোদিন ওদের সুখও ছিলো নিবিড়। সর্বত্র তাই-ই হয়। কিন্তু আমি দুঃখবাদীর মতো কথা বলবো না। ওদের লক্ষ্যটা ছিলো ভীষণ স্বচ্ছ আর সুনির্দিষ্ট। জো মনে করতো, খুব শীগগিরি ও এমন ছবি আঁকতে পারবে যে তা কেনার জন্যে পাতলা জুলপি আর মোটা পকেটবুকওয়ালা বৃদ্ধ ভদ্রলোকেরা তার স্টুডিয়োতে হাতাহাতি শুরু করে দেবে। আর ডেলিয়া ভাবতো, ও-ও নাম করবে এবং তারপর গান বাজনার ব্যাপারে ওর এতোই নাক উচু হয়ে উঠবে যে তখন বাদকদলের আসন ভরাট না হলে আর বক্সের টিকিট বিক্রি না হলে, ওর গলায় ব্যথা হবে এবং মঞ্চে যাবার বদলে ও তখন ব্যক্তিগত খাওয়ার ঘরে বসে গলদা চিংড়ি চিবোবে ।
কিন্তু আমার মতে ছোট ফ্ল্যাটের গার্হস্থ্য জীবনই সব চাইতে সেরা।
দিনভর শিক্ষা গ্রহণের পালা শেষ করে দুজনার আকুল-উচ্ছল আলাপ” রাতে সাধারণ খাবারদাবার আর সকালে সতেজ হালকা প্রাতরাশ•••আশা-আকাঙ্খার ভাব বিনিময়-একের সঙ্গে অন্যের আশা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া কিংবা না হওয়া-পারস্পরিক সহায়তা আর অনুপ্রেরণা এবং রাত এগারোটায়—আমার নীরসভাকে উপেক্ষা করবেন-জলপাই আর পনিরের পুর দেওয়া স্যাণ্ডুইচ।
কিন্তু কিছুদিন বাদেই শিল্প একটু দূরে সরে গেলো। মাঝে মাঝে তাই হয়, কেউ প্রত্যক্ষভাবে কিছু না করলেও হয়। স্থুল রুচিসম্পন্ন মানুষের ভাষায— সবই বেরিযে যাচ্ছে, ঘরে কিছুই আসছে না। মি. মাজিস্টার আর কের রোজেনস্টকের মাইনে বাকি পড়েছে। কিন্তু শিল্পকে ভালোবাসলে কোনো কাজই তেমন কঠিন বলে মনে হয় না। তাই ডেলিয়া বললো সংসারের হাল ঠিক রাখায় জন্য ও গান শেখানোর কাজ নেবে।
দু তিন দিন ছাত্র খুঁজে বেড়াবার পর একদিন সন্ধাবেলা ও উৎফুল্প হয়ে বাডিতে ফিরলো।
‘জানো জো, আমি একটা ছাত্রী পেয়েছি!” উচ্ছ্বলস্বরে ডেলিযা বললো, “ওরা ভীষণ ভালো লোক ! জেনারেল এ. বি. পিঙ্কনির মেয়ে— সেভেনটি ফাস্ট’ স্ট্রীটে বাড়ি। কি দারুণ বাডিটা ! সদর দরজাটা যদি তুমি দেখতে বলতে একেবারে বাইজানটাইন। আর ভেতরটা। ওহ, জো, এমন সুন্দর বাড়ি আমি কোনোদিনও দেখিনি। “জেনারেলের মেয়ে ক্লিমেটিন আমার ছাত্রী। আমি এর মধ্যেই মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। ভারি নরম-শরম মেয়ে-সর্বদা সাদা পোশাক পরে থাকে—ভারি মিষ্টি আর সাদাসিধে। মাত্র আঠারো বছর বয়েস। সপ্তাহে তিনদিন শেখাবো। আর ভেবে দ্যাখো জো, একদিনের মাইনে পাঁচ ডলার। এমন কাজ করতে আমার একটুও আপত্তি নেই। কারণ আরও দু-তিনটে ছাত্রী যোগাড় করতে পারলেই আমি আবার হের রোজেনস্টকের কাছে গান শেখা শুরু করতে পারবো। এবারে তোমার ওই কোঁচকানো ভ্রঁজোড়া একটু সোজা করে নাও, লক্ষ্মীটি – তারপর এসো, আমরা মজা করে খেয়েনি।’
তোমার দিক দিয়ে তুমি ঠিকই করেছে, ছুরি আর কাটা দিয়ে একপাত্র কড়াইশুটি আক্রমণ করতে করতে জো বললো, “কিন্তু আমার দিকটা একবার ভেবে দ্যাখো তো! তুমি কি মনে করেছে, তোমাকে রোজগারের জন্যে খাটাখাটনি করতে দিয়ে আমি উচ্চতর শিল্পের রাজত্বে ছিনালি করে বেড়াবো ?
কক্ষণো না। আর কিছু না হোক, খবরের কাগজ বিক্রি করে বা রাস্তায় খোয়া বিছিয়ে দু-এক ডলার তো ঘরে আনতে পারবো।
ডেলিয়া এগিয়ে গিযে জোর গলা জডিয়ে ধরলো, ‘বোকামো করে না, জো ! তোমাকে শেখার পালা চালিয়ে যেতেই হবে। এমন তো না যে আমাকে গান-বাজনা ছেডে দিয়ে অন্য কোনো কাজ করতে যেতে হচ্ছে । শেখাতে শেখাতেও আমি শিখবো । সব সময় আমি তো গান বাজনার মধ্যেই থাকছি। সপ্তাহে পনেরো ডলার দিয়ে আমরা লাখোপতির মতো সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবো। মি. মাজিস্টরকে ছাড়ার কথা তুমি কিছুতেই ভাববে না।’
‘বেশ, গোল গোল করে কাঁটা নীল রঙের সবজির থালাটার দিকে হাত বাড়ালো জো । ‘কিন্তু তোমার ওই গান শেখানোর ব্যাপারটা আমার বিচ্ছিরি লাগছে। ওটা শিল্প নয়।’
‘শিল্পকে ভালোবাসলে কোনো কাজই তেমন কঠিন বলে মনে হয় না, ডেলিয়া বললো ।
পার্কের মধ্যে আমি যে ছবিটা এঁকেছিলাম তাতে আকাশের দৃশ্যটা দেখে ম্যাজিস্টার খুব প্রসংশা করেছেন, জো বললো। আর টিংকল তার দোকানে কাচের জানলায় গোটা দুই ছবি টাঙিয়ে রাখার অনুমতি দিয়েছে। তেমন কোনো পয়সাওলা গবেটের চোখে যদি ওগুলো ধরে যায়, তাহলে হয়তো ওর মধ্যে একটা ছবি আমি বিক্কিরি করতে পারবো।’
‘নিশ্চয়ই পারবে, আমি জানি, ‘ডেলিয়া মিষ্টি করে বললো। ‘এবারে এসো, জেনারেল পিঙ্কনি আর এই মাংসের রোস্টটার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া যাক।
‘ পরের সপ্তাহে ল্যারাবিরা রোজই বেশ সকাল সকাল প্রাতরাশ সেরে নিয়েছে। সকালবেলাকার পরিবেশে সেন্টাল পার্কে গিয়ে ছবি আঁকায় জোর খুব উৎসাহ। ডেলিয়া তাকে খাইয়ে দাইয়ে, আদর করে, উৎসাহ দিয়ে, সাতটার সময় চুমু দিয়ে বিদায় জানাতো। শিল্পের আকর্ষণ বড়ো তীব্র। তাই জোর বাড়ি ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা সাতটা বেজে যেতো।
সপ্তাহের শেষে ডেলিয়া ওদের ৮ x ১০ (ফুট ) বৈঠকখানা ঘরের ৮ x ১০ (ইজ্ঞি) সেন্টার টেবিলে মধুর গর্ব আর ইষৎ ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিজয়িনীর মতো তিনটে পাঁচ ডলারের নোট ছুড়ে দিলো ।
‘মাঝে মাঝে ক্লিমেন্টনা আমাকে বড় খাটায়, সামান্য অবসন্ন সুরে ডেলিয়া বললো। ‘বোধহয় যথেষ্ট রেওয়াজ করে না। প্রায়ই একটা জিনিস বার বার করে দেখাতে হয়। তাছাড়া সব সময়েই একেবারে সাদা পোশাক পরে থাকে-দেখতে বিশ্রী একঘেয়ে লাগে। কিন্তু জেনারেল পিঙ্কনি ভারি ভালো মানুষ! তোমার সঙ্গে আলাপ হলে বুঝতে পারতে। ক্লিমেন্টনাকে পিয়ানো শেখানোর সময় মাঝে মাঝেই উনি ঘরে এসে হাজির হন। জানোই তো, ওঁর স্ত্রী মারা গেছেন । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনি নিজের সাদা ছাগুলে-দাড়িগুলো টানেন আর সব সময় শুধু জিজ্ঞেস করেন, কি, গলা-কাঁপুনি কেমন এগুচ্ছে । ওদের বৈঠকখানার দেয়ালে কাঠের কাজগুলো যদি তুমি দেখতে! অ্যাস্ট্রাকান গালচেগুলোরই বা কি বাহার । জানো জো, ক্লিমেন্টনার ছোটো ছোটো কাশিগুলো ভারি মজার। ওকে দেখে যেমন মনে হয়, আশা করি ও তার চাইতে বেশি শক্তপোক্ত । আমি কিন্তু সত্যিই ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। মেয়েটা ভারি ভদ্র -অতো উঁচু বংশের মেয়ে । জেনারেল পিঙ্কনির ভাই তো এক সময় বলিভিয়ার মন্ত্রী ছিলেন ‘
জো তখন মণ্টেক্রিস্টোর মতো মেজাজে পকেট থেকে একটা দশ, একটা পাঁচ, একটা দুই আর একটা এক ডলারের বৈধ নোট ডেলিয়ার নোটগুলোর পাশে নামিয়ে রেখে উচ্ছল সুরে বললো, জলরঙে আঁকা সেই ওপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া চৌকো স্তম্ভের ছবিটা পিয়োরিয়ার এক ভদ্রলোকের কাছে বিক্রি করে দিলাম !”
‘আমার সঙ্গে তামাশা করো না, জো—সে পিয়োরিয়ার লোক নয়।’
পুরোপুরিই তাই। তুমি যদি তাকে দেখতে, ডেল ! ইয়া মোটা চেহারা, গলায় পশমী মাফলার আর হাতে একটা পালকের খড়কে । টিংকলের দোকানের জানালায় ছবিটা দেখে সে প্রথমে ভেবেছিলো, ওটা একটা উইগুমিলের ছবি । যাই হোক, ছবিটা সে কিনেছে এবং আরও একটা ছবির ফরমাশ দিয়েছে। লাকাওয়ানার গুদামঘরের ছবি—তেলরঙে আঁকতে হবে—ওটা সে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। আর গান শেখানো ! হ্যাঁ, আমার ধারণা ওর মধ্যেও শিল্প আছে।’
‘তুমি যে শিল্পচর্চা চালিয়ে যাচ্ছো, এজন্যে আমি ভীষণ খুশি’ ডেলিয়া আন্তরিক সুরে বললো, ‘তুমি জিতবেই। ওহ, তেত্রিশ ডলার! খরচ করার জন্যে এর আগে আমরা কোনোদিনও এতো টাকা হাতে পাইনি। আজ রাত্তিরে আমরা ঝিনুক খাবো।’
‘আর ফিলি মিনিয়ঁর সঙ্গে শ্যাম্পেন,” বললো জো ।
পরের শনিবার সন্ধাবেলা জো আগে বাড়িতে ফিরলো। বৈঠকখানার টেবিলে আঠারোটা ডলার রেখে, সে হাত থেকে বেশ খানিকটা কালচে রঙ ধুয়ে সাফ করে নিলো। আধ ঘণ্টা বাদে ডেলিয়া এসে পৌছলো। ওর ডান হাতে একটা বেঢপ আকৃতির ব্যাণ্ডেজ।
এসব কি করে হলো ? যথারীতি প্রতি সম্ভাষণ জানাবার পর জিজ্ঞেস করলে জো ।
ডেলিয়া হাসলো, তবে খুব একটা খুশির হাসি নয়।
‘গান বাজনা শেখার পর ক্লিমেটিনা আমাকে ওয়েলস রাবিট খাওয়াবার জন্যে পীড়াপীডি করছিলো। এমন অদ্ভুত মেয়ে, বিকেল পাঁচটা বলে কিনা ওয়েলস রাবিট খেতে। জেনারেলও ছিলেন। চাটু আনার জন্যে ভদ্রলোক কিভাবে ছুটে গেলেন, তুমি যদি দেখতে—যেন বাডিতে চাকরবাকর কেউ নেই । আমি জানি ক্লিমেটিনার শরীরটা ভালো নয়—আর ও ভীষণ নার্ভাস। পরিবেশন করতে গিয়ে ও বেশ খানিকটা ফুটন্ত ঝোল চলকে আমার হাতে ফেলে দিয়েছে। ভীষণ যন্ত্রণা হয়েছিলো। বেচারী মেয়েটাও খুব দুঃখ পেয়েছে। আর জেনারেল পিঙ্কনি– তার তো প্রায় মাথা খারাপ হবার মতো অবস্থা ! এক ছুটে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গিয়ে উনি এক ধরনের তেল আর ব্যাণ্ডেজ বাঁধার জিনিসপত্তরগুলো আনার জন্যে কাকে যেন ওষুধের দোকানে পাঠিয়ে দিলেন। এখন আর ততোটা যন্ত্রণা হচ্ছে না।’
এগুলো কি ? আলতো করে ডেলিয়ার হাতটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে, ব্যাণ্ডেজের তলায় কয়েকটা সাদা ফেঁসো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো জো ।
“কি যেন একটা নরম জিনিস-ওগুলোতেই তেলটা লাগিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। আচ্ছা জো, তুমি আরও একটা ছবি বিক্রি করেছো নাকি ? টেবিলে রাখা টাকাগুলো ও আগেই দেখতে পেয়েছিলো ।
“বিক্রি করেছি কি না ?’ জো বললো, ‘তা ওই পিওরিয়ার ভদ্রলোককেই জিজ্ঞেস করে দেখো। আজ সে ওই গুদামঘরের ছবিটা নিয়েছে। এখনও কিছু ঠিক করেনি, তবে একটা পার্ক আর একটা হাডসন নদীর দৃশ্যও নেবে বোধহয়। কিন্তু আজ বিকেলে কটার সময় তোমার হাতটা পুড়লো, ডেল ?
‘পাচটা বোধ হয়, ডেল চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো। “ইস্ত্রিটা” মানে ঝোলটা মোটামুটি ওই সময়েই উনুন থেকে নেমেছিলো। তখন জেনারেল পিঙ্কনির অবস্থাটা তুমি যদি দেখতে জো, যখন. .
‘ এখানে একটু বসে, ডেল। হাত ধরে ডেলিয়াকে সোফায় বসিয়ে, জো ওর পাশে গিয়ে বসলে। তারপর নিজের একখানা হাত ওর কাঁধে রেখে জিগেস বললো, গত দু সপ্তাহ ধরে তুমি কি কাজ করছো, ডেল ?
দুচোখ ভরা প্রেম আর দৃঢ়তা নিয়ে এক মুহূর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে রইলো ডেলিয়া। তারপর জেনারেল পিঙ্কনির সম্পর্কে অস্ফুটে কি যেন বললো। কিন্তু শেষ অব্দি মাথা নিচু করে চোখের জলে সত্যি কথাটাই বলে ফেললো ও ।
‘আমি কোনো ছাত্রী পাচ্ছিলাম না, জো ।” ডেলিয়া স্বীকার করলো, ‘তুমি আঁকতে শেখা ছেড়ে দেবে, তাও সহ্য করতে পারছিলাম না। তারপর টুয়েন্টি-ফোর্থ স্ট্রিটের ওই বুড়ো লন্ড্রিটাতে পোশাক-আশাক ইস্তিরি করার একটা কাজ পেয়ে গেলাম। জেনারেল পিঙ্কনি আর ক্লিমেণ্টেনের ব্যাপারটা আমি বোধহয় ভালোই বানিয়েছিলাম, তাই না? আজ বিকেলে লন্ড্রির একটা মেয়ে একটা গরম ইন্ত্রি আমার হাতের ওপরে নামিয়ে রেখেছিলো। বাড়িতে ফেরার সময় সারা রাস্তা ধরে আমি ওই ওয়েলস র্য়্যাবিটের গল্পটা বানাতে বানাতে এসেছি। তুমি রাগ করোনি তো, জো ? আমি যদি কাজটা না নিতাম তাহলে তুমিও হয়তো পিওরিয়ার ওই ভদ্রলোকের কাছে তোমার ছবিগুলো বিক্রি করতে পারতে না ।”
“তিনি পিওরিয়ার লোক নন, জো আস্তে আস্তে বললো ।
তিনি যেখানকার লোকই হন, তাতে কিছু এসে যায় না। কিন্তু তুমি কি চালাক, জো “আমাকে একটা চুমু দাও! ”আচ্ছা, তোমার কেন সন্দেহ হলো যে আমি ক্লিমেটিনাকে গান শেখাই না ?
“আজ রাত অব্দি আমি তেমন কোনো সন্দেহ করিনি।” জো বললো, ‘তবে আজ বিকেলে ওপরের তলায় একটি মেয়ে ইস্ত্রিতে হাত পুড়িয়ে ফেলেছে শুনে, আমিই এঞ্জিন ঘর থেকে ওপরে ফেলো তুলো আর তেল পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। গত দু সপ্তাহ ধরে ওই লন্ড্রির এঞ্জিনটা আমিই চালাচ্ছি।
‘তাহলে তুমি ছবি’?
‘আমার পিওরিয়ার খদ্দের আর তোমার জেনারেল পিঙ্কনি-দুজনে একই শিল্পের সৃষ্টি। তবে তা অঙ্কন বা সঙ্গীত শিল্প নয়।
’ ওরা দুজনে হাসলো। তারপর জো বলতে শুরু করলো, ‘শিল্পকে ভালোবাসলে, তার জন্যে কোনো কাজই. .
‘না, জোর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে তাকে থামিয়ে দিলো ডেলিয়া, শুধু ‘ভালোবাসলে।’