কাজী লীনা: যদিও এখন রমযান মাস নয়, কিন্তু তাও লিখতে ইচ্ছে হলো। রমযান পবিত্র মাস মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য। এ মাসে শারীরিক এবং মানসিক সংযমের অনুশীলন করা হয়, বিনিময়ে পর্যাপ্ত পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। বিষয়টা যদি এমন হয় -আমরা পানাহার থেকে বিরত থেকে হয়ে উঠছি আরও অসংযমী আর নির্মম, তাহলে আদৌ কি কোনো মূল্য দেয়া হলো ধর্মীয় বিধিবিধানকে! একটা উদাহরণ বোধহয় বিষয়টি আরও খোলাসা করবে। সকাল ৮ টা, গন্তব্য অফিস, লোকাল বাসে ঠেলাঠেলি করে নিজের জন্য একটু জায়গা করে নেওয়া যেনো ইয়েস কার্ড হাতে পাওয়ার মতো আনন্দ! একটা সিটের উপর বঞ্চিতদের লোলুপ দৃষ্টি ঠেকাতে গিয়ে বাঙালির অর্ধেক শক্তিই খরচ হয়ে যায়, বাকী অর্ধেক সঞ্চিত করা হয় অফিসে শ্রম দেয়ার জন্য। জীবনের হিসাব মেলানোর চেষ্টায় রত আমার কানে হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে দু’জন যাত্রীর উত্তপ্ত আলাপন! বোঝার চেষ্টা করি ঘটনা! পারস্পরিক আগুনে তখন একে অন্যকে ঘায়েলের চেষ্টা করছে। একজন তো বলেই বসলো- ‘আজ আমি রোজা রাখছি বলে বেঁচে গেলি, না হলে তোরে কলার ধইরা নামাইয়া ইচ্ছামত থাবরাইতাম! ‘আমি হতবাক! একজন সংযমীর এ কী বাক্যবাণ! তিনি মনে মনে নামিয়ে ফেললেন তার সহযাত্রীকে এবং মনোবাসনা পূর্ণ করলেন! অপর পক্ষও থেমে নেই, তিনিও তার আপন অসংযম প্রদর্শনে ব্যস্ত! বেশ কিছুক্ষণ পর দু’জনেই ক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দিলেন, সম্ভবত দীর্ঘক্ষণ আহারের অভাব জানান দিচ্ছিলো শরীরে! এ তো গেলো একটা উদাহরণ, এরকম শ’য়ে শ’য়ে উদাহরণ দেয়া যাবে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বাঙালির উন্নয়নের অনুপস্থিতির জন্য ভগ্ন স্বাস্থ্যকে দায়ী বলে মনে করেন। আমি তাঁর এ চিন্তার সাথে একমত। আমাদের মানসিক পুষ্টির অভাব মূলত শারীরিক অপুষ্টির জন্য। আমরা যেমন জনসংখ্যার দাদামা বাজিয়ে যাচ্ছি, তেমনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতার চরম দীনতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্বাস্থ্য না থাকলে আর মন ভালো থাকে না, তাই ভালো মনের প্রতিচ্ছবি হয়ে হাসিও ফোটে না। চারিদিক মনে হয় মরুভূমির মতো, যেখানে মরূদ্যান -এর খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা। কিন্তু ধূ ধূ বালির বুকে নিজেরাই যে একেকটা মরূদ্যান হয়ে উঠতে পারি সে ভাবনাই আসে না! আমার মনে হয়, শুধু নিয়ম পালন না করে মন থেকে ভালোবেসে কাজ করুন। সংযম যদি সবক্ষেত্রে না হয় তা হলে আর ‘মানুষ’ হিসেবে গর্ব কীসের!
লেখক:
সম্পাদক: ফানুস (লিটল ম্যাগ)
ও সহযোগী সম্পাদক: অক্ষরবিডি.কম